• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের বৈশিষ্ট্যসমূহ

১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

১. দ্বিকক্ষবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় আইনসভা: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের মাধ্যমে কেন্দ্রে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রতিষ্ঠা করা হয়। উচ্চ কক্ষের নামকরণ করা হয় রাষ্ট্রীয় পরিষদ (Council of State) এবং নিম্নকক্ষের নামকরণ করা হয় ব্যবস্থাপক সভা (Legislative Assembly)। রাষ্ট্রীয় পরিষদের সদস্য সংখ্যা ছিল ৬০ জন এবং ব্যবস্থাপক সভার সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪৫ জন।

২. প্রাদেশিক আইনসভা: এ আইনের মাধ্যমে প্রদেশগুলোতে এক কক্ষবিশিষ্ট (Unicameral Legislature) আইনসভার ব্যবস্থা করা হয়। এ ছাড়া প্রাদেশিক আইনসভাগুলোর সদস্য সংখ্যাও বৃদ্ধি করা হয়। নির্বাচিত, সরকারি এবং বেসরকারি এ তিন ধরনের সদস্য নিয়ে এ আইনসভা গঠিত হবে।

৩. ক্ষমতা বণ্টন: এ আইনের মাধ্যমে সরকারের কার্যাবলি দুই ভাগ করে কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে বণ্টন করা হয়। কেন্দ্রীয় বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল- পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, মুদ্রা, ব্যাংক বাণিজ্য, ডাক, তার, রেলওয়ে, আয়কর ইত্যাদি। প্রাদেশিক বিষয়ের মধ্যে ছিল- আইন-শৃঙ্খলা, শিক্ষা, ভূমি, রাজস্ব, কৃষি, সেচ, বন, স্বাস্থ্য, বিচার ইত্যাদি।

৪. প্রদেশে সংসদীয় সরকার ও স্বায়ত্তশাসন ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রদেশসমূহে। সর্বপ্রথম সীমিতভাবে সংসদীয় সরকার ব্যবস্থা চালু এবং স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তন করা হয়।

৫. প্রদেশে দ্বৈতশাসন ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রদেশে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা (Dyarchy system) প্রবর্তন। প্রাদেশিক বিষয়সমূহকে 'সংরক্ষিত' (Reserved) এবং 'হস্তান্তরিত' (Transferred) এ দুই শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। সংরক্ষিত বিষয়াদি, যেমন- আইন-শৃঙ্খলা, পুলিশ ও বিচার বিভাগ, ভূমি আইন, অর্থ ইত্যাদি গভর্নর ও তাঁর শাসন-পরিষদের হাতে সংরক্ষিত রাখা হয়। এ সকল বিষয় গভর্নর তাঁর শাসন-পরিষদের পরামর্শক্রমে পরিচালনা করেন। অপরদিকে হস্তান্তরিত বিষয়াদি, যেমন- জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, স্থানীয় সরকার ইত্যাদির দায়িত্ব ভারতীয় প্রাদেশিক মন্ত্রিগণের নিকট হস্তান্তর করা হয়। এ সকল বিষয়ে গভর্নর সাধারণত ভারতীয় মন্ত্রিগণের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করেন। এভাবে প্রাদেশিক সরকারের এখতিয়ারকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয় বলে একে দ্বৈতশাসন বলা হয়।

৬. পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা: এ আইনের মাধ্যমে মুসলমানদের জন্য 'পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা' (Separate Electorate) অব্যাহত রাখা হয়। তাছাড়া পাঞ্জাবের শিখ, অ্যাংলো ইন্ডিয়ান, ইউরোপীয় সম্প্রদায় এবং ভারতীয় খ্রিষ্টানগণ পৃথক নির্বাচনের সুযোগ ও অধিকার লাভ করে এ আইনের মাধ্যমে।

৭. যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন এ আইনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ভারতীয় উপমহাদেশে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। প্রথমবারের মতো সরকারি বিষয়গুলোকে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক এ দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। কেন্দ্রীয় বিষয়গুলোকে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে এবং প্রাদেশিক বিষয়গুলোকে প্রাদেশিক সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয়।

৮. নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো এ উপমহাদেশে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা। এ আইনে উল্লেখ করা হয় যে, প্রাদেশিক আইন পরিষদে অন্তত শতকরা ৭০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন এবং শতকরা ২০ জনের বেশি সরকারি সদস্য থাকতে পারবেন না। প্রত্যেক প্রাদেশিক আইনসভায় তিন প্রকারের সদস্য থাকবেন। যেমন- নির্বাচিত সদস্য, সরকারি সদস্য ও মনোনীত সদস্য।

৯. ভারতীয় হাইকমিশনারের পদ সৃষ্টি: এ আইনের মাধ্যমে ইংল্যান্ডে সর্বপ্রথম ভারতীয়দের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় দেখাশুনার জন্য একটি হাইকমিশনারের পদ সৃষ্টি করা হয়। তিনি গভর্নর জেনারেল কর্তৃক ৫ বছরের জন্য নিযুক্ত হতেন।

১০. গভর্নর জেনারেলের ক্ষমতা: এই আইনে গভর্নর জেনারেলকে চূড়ান্ত ক্ষমতার অধিকারী করা হয়। তিনি আইন পরিষদ প্রণীত যেকোনো আইন বাতিল করতে পারতেন।

১১. ভারত সচিবের ক্ষমতা বৃদ্ধি: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে ভারতীয় সচিবের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়। তার অত্যধিক ক্ষমতার কারণে তাকে 'হোয়াইট হলের প্রতাপশালী মুঘল সম্রাট' বলে অভিহিত করা হতো।

১২. প্রাদেশিক গভর্নরের ক্ষমতা: এ আইনে প্রাদেশিক গভর্নর প্রভৃত ক্ষমতার অধিকারী হন। তিনি শাসন পরিষদ ও মন্ত্রী পরিষদের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে শাসন কার্য পরিচালনা করতে পারতেন।

১৩. উপদেষ্টা বোর্ড গঠন: ১৯১৯ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসন কার্যকর হবার দশ বছর পর একটি উপদেষ্টা বোর্ড ও সংবিধিবদ্ধ কমিশন (Statutory Commission) গঠনের কথা বলা হয়। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে যে সব শাসন সংক্রান্ত ও সংস্কারমূলক কাজ সম্পন্ন করা হবে সে সম্পর্কে সুপারিশসহ প্রতিবেদন পেশ করাই ছিল এ কমিশনের মুখ্য উদ্দেশ্য।

১৪. সরকারি আয়ের শ্রেণিবিভাগ: এ আইনের দ্বারা সরকারি আয়ের শ্রেণিবিভাগ করা হয়। এর মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের আয়ের উৎসও নির্ধারিত হয়। কেন্দ্রের জন্য আয়কর ও বাণিজ্যিক কর এবং প্রদেশের জন্য ভূমি রাজস্ব এবং মাদকদ্রব্যের ওপর আবগারি শুল্ক নির্ধারণ করা হয়।

১৫. কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া গঠন: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে কয়েকজন ভারতীয় সদস্য নিয়ে ১২ সদস্যবিশিষ্ট একটি কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া গঠন করা হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ