• হোম
  • একাডেমি
  • সাধারণ
  • একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি
ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

ব্রিটিশ ভারতে প্রতিনিধিত্বশীল

দ্বৈতশাসন ব্যর্থতার কারণ

১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে প্রবর্তিত দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্রিটিশ সরকার ভারতবর্ষে দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ লক্ষ্যেই প্রদেশগুলোতে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করে। বাস্তবে দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা কার্যকর করার ক্ষেত্রে নানা রকম জটিলতা দেখা দেয়। ফলে ১৯১৯ সালে প্রবর্তিত দ্বৈতশাসন নানা কারণে সফল হতে পারেনি। প্রদেশগুলোতে একই সাথে দুই ধরনের কর্তৃপক্ষের শাসন বিভিন্ন জটিলতার সৃষ্টি করে এবং ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। নিম্নে দ্বৈতশাসন ব্যর্থতার কারণসমূহ তুলে ধরা হলো:

১. গভর্নরের প্রভুসুলভ আচরণ: ১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে প্রদেশগুলোতে দ্বৈতশাসন ব্যর্থতার প্রধান কারণ ছিল গভর্নরের প্রভুসুলভ আচরণ ও অবাধ ক্ষমতা। কার্যনির্বাহী পরিষদের উপর গভর্নরের সীমাহীন কর্তৃত্ব ছিল। অন্যদিকে গভর্নরের খেয়ালখুশির উপর মন্ত্রিদের স্বপদে বহাল থাকার বিষয়টি নির্ভরশীল ছিল বলে হস্তান্তরিত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে তিনি সহজেই মন্ত্রিদের পরামর্শ উপেক্ষা করতে পারতেন।

২. মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীলতার অভাব গভর্নর মন্ত্রিদের সাথে যৌথভাবে পরামর্শের পরিবর্তে ব্যক্তিগতভাবে পরামর্শ করতেন। তাই মন্ত্রিসভার সদস্যগণ তাদের কাজের জন্য আইনসভার নিকট ব্যক্তিগতভাবে দায়ী ছিলেন। যৌথ দায়িত্বশীলতার অভাবে সংসদীয় গণতন্ত্রের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি।

৩. বিষয় বণ্টনে অসংগতি গভর্নরের কার্যনির্বাহী পরিষদ ও প্রাদেশিক মন্ত্রিপরিষদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টনের ক্ষেত্রে নানারকম অসংগতি বিদ্যমান ছিল। ফলে মন্ত্রিগণ গভর্নরের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার অভাবে ঠিকভাবে কাজ করতে পারেননি।

৪. সরকারি কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণের অভাব: সরকারি কর্মচারীদের নিয়োগ, বেতন-ভাতা, বদলি, বরখাস্ত প্রভৃতি বিষয় ভারত সচিবের জন্য সংরক্ষিত ছিল। সরকারি কর্মচারিগণ তাই মন্ত্রিদের গ্রহণ করতেন না। সরকারি কর্মচারীদের নিয়ন্ত্রণের অভাব দ্বৈতশাসন ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম কারণ।

৫. মন্ত্রিপরিষদ ও কার্যনির্বাহী পরিষদের মধ্যে বিরোধ প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যগণ জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হতেন কিন্তু গভর্নরগণ ছিলেন মনোনীত। তাই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে পারস্পরিক বিরোধ ও সংশয় লেগেই থাকত। এ দুই সংস্থার মধ্যকার দ্বন্দ্ব প্রাদেশিক প্রশাসনের অচলাবস্থার সৃষ্টি করে।

৬. আর্থিক অসংগতি মন্ত্রীদের ওপর উন্নয়নমূলক কাজের দায়িত্ব অর্পিত হলেও অর্থ দপ্তর পরিচালনা করতেন গভর্নর ও কার্যনির্বাহী পরিষদ। ফলে মন্ত্রিগণ যথাসময়ে আর্থিক বরাদ্দ পেতেন না। ফলে অনেক সময় তাদের উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা ত্যাগ করতে হতো।

৭. সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ দ্বৈতশাসন ব্যর্থতার জন্য সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষও দায়ী ছিল। হিন্দু, মুসলিম ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, অবিশ্বাস জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট করে।

৮. জনগণের বিরোধিতা ও আন্দোলন দায়িত্বশীল সরকার ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হওয়ায় এবং কংগ্রেসের আন্দোলনের ফলে জনগণ দ্বৈতশাসনের বিরোধিতা শুরু করে। ফলে এ ব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে এবং ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

৯. রাজনৈতিক অস্থিরতা: ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশসমূহে দ্বৈতশাসন প্রবর্তন ছিল দায়িত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। ব্রিটিশ সরকার পরীক্ষামূলকভাবে প্রথমবারের মতো প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগী হয়। কিন্তু দ্বৈতশাসন প্রবর্তনের সময় ভারতে অস্থির ও অশান্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিরাজমান থাকায় ভারতীয় জনগণের নিকট দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা আবেদন সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়।

১০. সংসদীয় গণতন্ত্র ও ঐতিহ্যের অভাব: ভারতবর্ষে সংসদীয় গণতন্ত্র ও ঐতিহ্য বিকশিত না হওয়ায় প্রাদেশিক মন্ত্রিসভার সদস্যগণ আইনসভার নিকট জবাবদিহি করতে অস্বস্তিবোধ করতেন। আইনসভার সদস্যগণও মন্ত্রীদের প্রশ্ন করতে বিব্রতবোধ করতেন। সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রাকটিসের অভাব দ্বৈতশাসন ব্যর্থতার কারণ হিসেবে কাজ করে।

১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে প্রবর্তিত দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা সফল না হলেও সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয় এমন মনোভাব অনেকে পোষণ করেননি। এ ব্যাপারে মুডিম্যান কমিটির রিপোর্টে বলা হয় যে, দ্বৈতশাসনের ফলে নির্বাচকমণ্ডলী, আইন পরিষদের সদস্যবর্গ ও মন্ত্রিগণ সংসদীয় শাসনব্যবস্থায় রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের সুযোগ পান। এ রিপোর্টে দ্বৈতশাসনের ব্যর্থতা যদিও স্বীকার করে নেওয়া হয়নি তথা বাংলা ও উত্তর প্রদেশে দ্বৈতশাসন কার্যত অচল হয়ে পড়েছিল বলে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ