- হোম
- একাডেমি
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
- ভাব-সম্প্রসারণ
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
ভাব-সম্প্রসারণ
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ভাব-সম্প্রসারণ: পৃথিবীর সকল দেশেরই জাতীয় জীবনে এমন দু-একটি দিন আসে যা স্বমহিমায় উজ্জ্বল। আমাদের জাতীয় জীবনে এমনি স্মৃতি-বিজড়িত মহিমা-উজ্জ্বল একটি দিন একুশে ফেব্রুয়ারি। সারা বিশ্বের বাংলা ভাষীদের কাছে এ দিনটি চির-স্মরণীয়। একুশে ফেব্রুয়ারির ইতিহাস একদিকে আনন্দের, অন্যদিকে বেদনার। পাকিস্তানি স্বৈর-শাসকরা বাঙালির মুখ থেকে বাংলা ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল ১৯৪৮ সালে। বাংলার মানুষ সে অন্যায় মেনে নেয় নি। বাংলার দামাল ছেলেরা তুমুল বিরোধিতা করে রাজপথে নেমে আসে। 'রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই' দাবিতে বাংলার আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করে তোলে। স্বৈরাচারী পাক-সরকার আন্দোলন দমনের জন্য শুরু করে গ্রেফতার, জুলুম, নির্যাতন। এতেও বাংলার দুরন্ত ছেলেদের দমাতে না পেরে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তাদের মিছিলে নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করে। রফিক, শফিক, বরকত, জব্বার, সালামের রক্তে ঢাকার রাজপথ রঞ্জিত হয়। বাংলা পায় রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা। আর সমগ্র বাঙালির চেতনায় চিরস্মরণীয় ও বরণীয় থাকে ভাষা-শহিদদের নাম। তাঁদের অবদান আমরা কোনো দিন ভুলব না।
আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি
ভাবসম্প্রসারণ: ভাষা আন্দোলনের অকুতোভয় শহিদদের রক্তদান অবিস্মরণীয়। তাঁরা বাঙালি জাতির স্মৃতিতে চিরকাল অমর-অক্ষয়। কেননা পৃথিবীর ইতিহাসে নিজ মাতৃভাষা রক্ষা ও প্রতিষ্ঠার জন্য বাঙালিরাই প্রথম রক্ত দিয়েছে, জীবন উৎসর্গ করেছে।
বাঙালির মাতৃভাষা বাংলা। তারা স্বাচ্ছন্দ্যে এ ভাষায় তাদের মনের সব অনুভূতি-আকুতি প্রকাশ করে পরিতৃপ্ত হয়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী সমৃদ্ধ ও বহুল ব্যবহৃত বাংলা ভাষাকে ধ্বংস করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। তারা বাংলার পরিবর্তে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেয় বাঙালির ওপর। এদেশের মানুষ শাসকদের এ জঘন্য ও ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। সভা-সমাবেশ, মিছিল-স্লোগানে সারাদেশ কেঁপে ওঠে। মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য গঠিত হয় 'সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ'। ১৯৫২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি পরিষদের এক সভায় ২১ ফেব্রুয়ারি 'ভাষা দিবস পালন' ও হরতালের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তদানীন্তন সরকার জনরোষের ভয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে এক মাসের জন্য ঢাকা জেলার সর্বত্র সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা, ধর্মঘট নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু ছাত্র-জনতা ঐদিন ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে রাজপথে নামলে পুলিশ নির্মমভাবে গুলিবর্ষণ করে। পুলিশের গুলিতে শহিদ হন রফিক, জব্বার, সালাম, বরকতসহ নাম না জানা অনেকে। এই ঘটনার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে সারা দেশ। মিছিল-মিটিং-স্লোগানে ফেটে পড়ে ছাত্র-জনতা। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে নির্মাণ করা হয় শহিদ মিনার। বিক্ষুব্ধ আন্দোলনের মুখে আতঙ্কিত পাকিস্তান সরকার পরবর্তীতে বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়। একুশে ফেব্রুয়ারির এই চেতনা জীবন্ত হয়ে ওঠে বাংলা কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, চলচ্চিত্র, সংগীত, চিত্রকলার ক্যানভাসে। ভাষা আন্দোলনে বাঙালি ছাত্র-জনতার আত্মোৎসর্গের অসাধারণ স্মৃতিতর্পণ প্রতিফলিত হয় আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি/আমি কি ভুলিতে পারি' অমর পঙ্ক্তিসমৃদ্ধ গানে। একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটিয়েছে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার সংগ্রাম ও স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ একুশের চেতনারই ফল। একুশে ফেব্রুয়ারি এখন জাতিসংঘ স্বীকৃত 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'। বাংলাদেশের মানুষের জন্য এ এক বিরাট গৌরব। একশে একুশে ফেব্রুয়ারি চিরস্মরণীয়, চিরন্তন, অমর। কাজেই বাংলাদেশের মানুষের জীবনে একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব অপরিসীম।
সম্পর্কিত প্রশ্ন সমূহ

