• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

সময়ের মূল্য অথবা সময়ানুবর্তিতা

ভূমিকা: সময় নিরবধি বয়ে চলে। তার চলার শেষ নেই, কিন্তু মানবজীবন সংক্ষিপ্ত। এখানেই গরমিল। মানুষ চায় তার সংক্ষিপ্ত জীবনায়তনের মধ্যে বহুতর কর্মের উদ্যাপন। কিন্তু সময় তা মঞ্জুর করে না। কর্ম উদ্‌যাপনের আগেই তার বিদায়ের ডাক এসে পড়ে। মানুষের কাছে সময় তাই অমূল্য ধন। সময় চলে যায় নদীর স্রোতের মতো। চিরন্তন প্রবহমানতাই তার মৌল বৈশিষ্ট্য।

সময়ের গুরুত্ব: সময়ের ধাবমানতার জন্যই জীবন মানুষের কাছে পরম মূল্যবান। সময় অনন্ত, কিন্তু জীবন সীমাবদ্ধ। তার এক প্রান্তে জন্ম, অন্য প্রান্তে মৃত্যু। এই জন্ম ও মৃত্যুর শাসনে জীবন সদা সংকুচিত। মানুষ চায় সময়ের অন্তহীনতার মতো অন্তহীন জীবন; কিন্তু পায় না। মানবজীবনের চরম ট্র্যাজেডি এখানেই। তাই সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব সম্পর্কে যথার্থ সচেতন থাকা প্রয়োজন।

সময়ের অবহেলার পরিণাম: জীবনের এই সীমাবদ্ধ অবসরে দুর্লভ সময়ের যে ভগ্নাংশটুকু পাওয়া যায়, তার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমেই জীবন সার্থক এবং সুখময় হয়ে ওঠে। কাজেই জীবনের সংক্ষিপ্ত সীমায়তনের মধ্যে যে পরম মূল্যবান সময় আমরা হাতে পাই, সেই দুর্লভ সময় যদি অবহেলা করে, আলস্যভরে কাটিয়ে দেই, তাহলে তা হবে সময়ের নির্বোধ অপচয় 'মাত্র।

সময়ের মূল্যবোধের অর্থ: প্রকৃতপক্ষে, সময়ের যথার্থ মূল্যবোধই জীবনের সাফল্য অর্জনের সোপান। সময়ের মূল্যবোধ হলো, যে সময়ের যে কাজ, তা সেই সময়ে সম্পাদন করা। যে তা করে না, সে করে সময়ের অমর্যাদা এবং পরাজয়ই হয়। তার জীবনের চরম পরিণতি। সময়ের এই অবহেলার জন্য ভবিষ্যতে তাকে অনুশোচনা করতে হবে। যে কৃষক ফসলের ঋিতুতে ফসলের বীজ বপন না করে আলস্যে সময় অতিবাহিত করে, সে কীভাবে ফসল ওঠার সময় খামারপূর্ণ ফসল আশা করতে পারে? সময় চলে গেলে তখন আর কান্নাকাটি করেও লাভ হয় না। মানবজীবনেও সেই একই কথা। জীবনে যখন শক্তি থাকে, সামর্থ্য থাকে, তখন আলস্যে অযথা কালহরণ করে জীবন কাটালে শেষ বয়সে অবশ্যই দুঃখ ভোগ করতে হয়। তাই সময়ের মূল্যবোধের গুরুত্ব অনেক।

সময়ের অপচয়ের অর্থ: সময়ের মূল্যবোধের অভাবের পিছনে আছে মানুষের আলস্য, উদাসীনতা এবং অদৃশ্য সময়ের নিঃশব্দ অনন্ত যাত্রা। সময়কে চোখে দেখা যায় না, তার অনন্ত যাত্রার ঘণ্টাধ্বনিও শোনা যায় না। মানুষ তাই মনে করে, সময়ও বুঝি তার আলস্যের অনড় পাথরের মতো স্থির হয়ে আছে। তাই সময় পৃথিবীর অলস, কর্মবিমুখ মানুষদের ফাঁকি দিয়ে তার অনাদি যাত্রাপথে প্রস্থান করে। কিন্তু সময় পৃথিবীর সেই অলস, কর্মবিমুখদের আলস্য এবং কর্মবিমুখতাকে ক্ষমা করে না। সে তাদের কপালে দুঃখময় ভবিষ্যতের অভিশাপ এঁকে দিয়ে প্রস্থান করে।

সময়ের সদ্ব্যবহার: শৈশবই কর্মজীবনে প্রবেশের তোরণদ্বার। এ সময়ই জীবনের প্রস্তুতির কাল। ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের সকল দায়িত্বভার বহনের যোগ্যতা এ সময়েই অর্জন করতে হয়। শৈশবকালের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথভাবে ব্যবহার করলে এবং অমূল্য সময়ের অপচয় না করে তার প্রতিটি দুর্লভ মুহূর্তকে জীবনক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে পরবর্তীকালে সুখ ও শান্তি দুই-ই পাওয়া যাবে। কর্মই সময়ের পরিমাপের একমাত্র মাপকাঠি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কে কত মহৎ এবং মূল্যবান কাজ সম্পন্ন করতে পারে, তা দিয়েই তার সাফল্য বিবেচিত হয়। তাই সময়ানুবর্তিতা জীবনে সাফল্যলাভের চাবিকাঠি এবং সময়ানুবর্তিতার মাধ্যমে কল্যাণপূত কর্মেই জীবনের চরম সার্থকতা।

উপসংহার: সময়ের অপচয় একটা বড়ো অপরাধ। যারা সময় নষ্ট করে তারা জীবনে উন্নতি করতে পারে না। সময়ের যথার্থ মূল্যবোধই ব্যক্তি এবং জাতীয় জীবনের সাফল্যের সোপান। যেহেতু সময় জীবনের সমস্ত সাফল্য ও সুখের উৎস, তাই প্রত্যেককে সময়ের মূল্য সম্বন্ধে সচেতন হওয়া এবং তার সদ্ব্যবহার করা উচিত। তবেই জাতি পাবে গতি, দেশ হবে সমৃদ্ধ, জীবন হবে আনন্দময়।