- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
সংবাদপত্র অথবা, জ্ঞান বিকাশে সংবাদপত্রের ভূমিকা
ভূমিকা: জাতীয়, আন্তর্জাতিক এবং দৈনন্দিন জীবনের ঘটনাপ্রবাহের তথ্য নিয়ে যেসব পত্রপত্রিকা প্রকাশিত হয়, তার নাম সংবাদপত্র। মানুষের জানার আগ্রহ ও তথ্য সংগ্রহের প্রবণতা থেকে সংবাদপত্রের উৎপত্তি। মানবজীবনের নানা প্রয়োজন সাধনে এর স্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সংবাদপত্রের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: প্রথম সংবাদপত্রের প্রচলন হয় চীন দেশে। এদেশে মুঘল আমলে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য সংবাদ পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সংবাদপত্র এদেশে প্রচলিত হয় ইংরেজ শাসনামলের শুরুতে। ছাপাখানার প্রসারের ফলে সংবাদপত্র প্রকাশ ও প্রচার সহজ হয়েছে। বাংলাদেশের তথা ভারতবর্ষের প্রথম মুদ্রিত সংবাদপত্র 'বেঙ্গল গেজেট'। তারপর ইন্ডিয়া গেজেট, ক্যালকাটা গেজেট, হরকরা ইত্যাদি পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলা ভাষায় প্রথম সাময়িকপত্র 'দিগদর্শন'। ১৮১৮ সালের মে মাসে জে.সি. মার্শম্যানের সম্পাদনায় শ্রীরামপুর মিশন থেকে সাপ্তাহিক 'সমাচার দর্পণ' প্রকাশিত হয়। রামমোহন রায় ও ভবানীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় সাপ্তাহিক 'সম্বাদ কৌমুদী' প্রকাশ করেন ১৮২১ সালে। ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সম্পাদনায় সাপ্তাহিক 'সংবাদ প্রভাকর' দৈনিক পত্রিকায় পরিণত হয়।
সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তা: বিভিন্ন গণসংযোগ মাধ্যমের মধ্যে সংবাদপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সমগ্র বিশ্বে কোথায় কী ঘটছে তা জানার জন্য মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই। সংবাদপত্রের মাধ্যমে তা জানা যায়। এতে মানুষের জ্ঞানের পরিধি বাড়ে। সারা বিশ্বের মানুষের চিন্তাধারার সঙ্গে সংবাদপত্রের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া যায়। আবার কোথায় কী আবিষ্কৃত হয়েছে তা জানা যায় সংবাদপত্রের মাধ্যমে। আশ্চর্য ঘটনা, আনন্দদায়ক সংবাদ, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নানা কথা সংবাদপত্রে প্রচারিত হয়। সংবাদপত্রের মাধ্যমে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা সম্পর্কে অবহিত হওয়া যায়। নানা বিষয়ের আলোচনা এতে উপস্থাপিত হয়। সাহিত্য সম্পর্কে যেমন আলোচনা থাকে, তেমনি থাকে সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে নানা ধরনের প্রবন্ধ নিবন্ধ। সংবাদপত্রে মানুষের চিন্তাচেতনার প্রতিফলন ঘটে।
সংবাদপত্রের প্রকার: সংবাদপত্র নানা প্রকারের হতে পারে। যেমন- দৈনিক, সাপ্তাহিক, অর্ধ-সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক ইত্যাদি। আমাদের দেশের পত্রপত্রিকাগুলোর মধ্যে দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক যুগান্তর, দৈনিক প্রথম আলো, দৈনিক মানবজমিন, দৈনিক সংবাদ, দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক নয়া দিগন্ত, দৈনিক ইনকিলাব, বাংলাদেশ প্রতিদিন, আমাদের সময়, সাপ্তাহিক বিচিত্রা, সাপ্তাহিক পূর্ণিমা, সাপ্তাহিক সোনার বাংলা, সাপ্তাহিক রোববার, পাক্ষিক স্বাগতম, মাসিক মদীনা, মাসিক আগমন; ত্রৈমাসিক নতুন দিগন্ত, প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
শিক্ষা বিস্তারে সংবাদপত্র: সংবাদপত্রের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা, সচেতন করে তোলা, তথ্য প্রকাশ করা ও বিশেষ করে জ্ঞানলাভে প্রণোদিত করা। উনিশ শতকের বাংলায় যে নবজাগরণের উদ্বোধন ঘটেছিল, তাতে বিরাট ভূমিকা ছিল সংবাদপত্রের। সংবাদপত্র পাঠ করেই মানুষ জানতে ও বুঝতে পেরেছিল, কেন দেশে নারীশিক্ষার প্রসার ঘটা উচিত, বাল্যবিবাহ সমাজে ও জীবনে কতখানি ক্ষতিকর, বিধবা বিবাহ কতখানি শাস্ত্রসম্মত, অন্ধ ধর্মচেতনা জ্ঞান ও শিক্ষার প্রসারকে কতখানি আবদ্ধ করে রাখে। বর্তমানে আমাদের সংবাদপত্রগুলোতে শিক্ষা বিভাগ চালু হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছে এবং শিক্ষার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ছে।
জনমত গঠনে সংবাদপত্র: জনমত গঠনে সংবাদপত্রের অপরিমিত শক্তি আছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের মধ্যে জনমানসে সংবাদপত্রের শক্তি প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা যথেষ্ট। তবে সে শক্তি ও ক্ষমতা যাতে অপপ্রয়োগ না হতে পারে সেজন্য তাকে সংযত হতে হয়। রেডিও এবং টেলিভিশন যেখানে নানারকম নিয়ন্ত্রণের চাপে থাকে সেখানে একমাত্র সংবাদপত্রই বহুলাংশে স্বাধীন ও প্রকৃত জনমত প্রকাশ করতে সমর্থ।
সংবাদপত্রের অপকারিতা: সংবাদপত্রের অনেক উপকারিতা থাকলেও কিছু কিছু অপকারিতাও আছে। কখনো কখনো মিথ্যা, উদ্ভট খবর প্রচার করে পাঠককে বিভ্রান্ত করে থাকে। এতে মানুষ এবং দেশের ক্ষতি হয়। কোনো কোনো পত্রিকা। রাজনৈতিক দলের মুখপত্র হিসেবে বানোয়াট খবর প্রচার করে, এতে দেশ ও জনগণের উপকারের চেয়ে অপকার হয় বেশি।
উপসংহার: সংবাদপত্র একটি গুরুত্বপূর্ণ গণমাধ্যম। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি বলেছিলেন, "আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় আমি সরকারহীন সংবাদপত্র চাই, না সংবাদপত্রহীন সরকার চাই, আমি প্রথমটাই বরণ করে নেব।" সংবাদপত্র একটি দেশের উন্নতি, অবনতি বা জনমত গঠনের প্রধান হাতিয়ার।