• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

কুটির শিল্প অথবা, বাংলাদেশের কুটির শিল্প

ভূমিকা: কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের জন্য শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ প্রয়োজন। এর জন্য কুটির শিল্পের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। অতি প্রাচীনকাল থেকেই বাংলাদেশের কুটির শিল্প লাভ করেছিল বিশ্ববিশ্রুত মর্যাদা। বাঙালি শিল্পীদের হাতে তৈরি মসলিন সে কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তাই কুটির শিল্পের প্রতি আরও যত্নবান হওয়া দরকার।

কুটির শিল্প: কুটিরজাত শিল্পদ্রব্যই কুটির শিল্প নামে আখ্যায়িত। ঘরে বসে হালকা যন্ত্রপাতি দিয়ে হাতের সাহায্যে যেসব দ্রব্যসামগ্রী শিল্পসম্মতভাবে তৈরি করা হয়, তাকে কুটির শিল্প বলে। একসময় দিনাজপুরের জাঁতি, যশোরের চিরুনি, ঢাকার মসলিন ইত্যাদির খ্যাতি ছিল বেশ। কুটির শিল্পে নানা শ্রেণির লোক কাজ করে থাকে। যেমন- কামার, কুমার, তাঁতি, কাঁসারি, শাঁখারি, স্বর্ণকার প্রভৃতি।

কুটির শিল্পের বৈশিষ্ট্য: রুচি ও বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে কুটির শিল্প তুলনাহীন। এই শিল্প নানা প্রকার কারুকার্যখচিত দ্রব্যাদি উৎপাদন করতে পারে। কুটির শিল্প কারিগরদের পরিবারস্থ লোকদের কাজে নিয়োগের সুযোগ দিয়ে থাকে। যেমন-পাটের দ্রব্যসামগ্রী প্রস্তুত, বিড়ি প্রস্তুত, বোতাম তৈরি করা, হস্তচালিত তাঁতের সুতিবস্ত্র তৈরি, শঙ্খশিল্প, মাটির হাঁড়ি-পাতিল, পুতুল তৈরি, শীতলপাটি তৈরি, বাঁশ-বেতের চেয়ার, টেবিল তৈরি ইত্যাদি; যা বৃহদায়তন শিল্পে বহুল পরিমাণে উৎপাদনের সুবিধা নেই। আবার এমনও দেখা যায় যে, অনেক কুটির শিল্প বৃহৎ কারখানা শিল্পের উৎপাদনের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে থাকে। বিশেষ করে কুটির শিল্প দ্বারা গ্রামাঞ্চলের কৃষকদের জন্য সরবরাহ এবং পরিপূরক আয়ে যথেষ্ট সুবিধা আছে।

বেকার সমস্যা সমাধানে কুটির শিল্প: আমাদের দেশে বেকার সমস্যা প্রকট রূপ ধারণ করেছে। এ সমস্যার সমাধান করা যায় কুটির শিল্পের ব্যাপক প্রসারের মাধ্যমে। এ ব্যাপারে অর্থনীতিতে সফল জাপানের কথা স্মরণ করা যেতে পারে। জাপানের অর্থনীতির মেরুদন্ড বলতে গেলে কুটির শিল্প ও ক্ষুদ্র যন্ত্রশিল্প। শতকরা ৮৫ জন জাপানি শ্রমিক কুটির ও ক্ষুদ্রশিল্পে নিযুক্ত। সরকারি সহযোগিতায় কুটির শিল্পের প্রসার ঘটলে আমাদের বেকার সমস্যাও অনেকাংশে কমে আসতে পারে।

কুটির শিল্পের অবনতির কারণ: বাংলাদেশে কুটির শিল্পের অবনতির পেছনে নানা কারণ বিদ্যমান। বিদেশি দ্রব্যসন্ডার এদেশে আগমন থেকে শুরু হলো বাংলার কুটির শিল্পের পতন। বিদেশি শাসক ইংরেজ রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর চড়া হারে শুল্ক ধার্য করে। আর নিজেরা সন্তায় এদেশি কাঁচামাল কিনে প্রায় বিনা শুল্কেই বাণিজ্য শুরু করে দেয়। তাঁতিদের ডান হাতের আঙুল কেটে তাঁত শিল্পের সর্বনাশ ঘটায়। বাংলায় রেশমশিল্পও বিদেশি কৃত্রিম রেশমের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হটে যায়। কুটির শিল্পীরা অনেকেই খেতমজুর হয় এবং কেউ কেউ যোগ দেয় কারখানায় শ্রমিক হিসেবে। এসব কারণে আমাদের কুটির শিল্প চলে যায় অবনতির দিকে।

কুটির শিল্প পুনরুজ্জীবনের উপায়: কুটির শিল্পকে বাঁচাতে হলে গ্রাম্যশিল্পীকে জোগাতে হবে মূলধন, সরবরাহ করতে হবে সস্তায় কাঁচামাল। সরকারি তরফ থেকে উৎসাহ দান ছাড়া কুটির শিল্পের পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়। এর জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন তা হচ্ছে-

  • কুটির শিল্পে নিয়োজিত ব্যক্তিদেরকে যথাসম্ভব সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা প্রদান করতে হবে।
  • দেশের প্রতিটি গ্রামে সমবায় ভিত্তিতে কুটির শিল্প গড়ে তুলতে হবে।
  • কুটিরশিল্পীদের উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • দেশের নারীসমাজকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে কুটির শিল্পের নানা কাজে নিযুক্ত করতে হবে।
  • আমাদের কুটির শিল্পে যেসব পণ্য বেশি উৎপন্ন হবে, বিদেশ থেকে সে জাতীয় পণ্য অবাধ আমদানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে।
  • নিপুণ কুটিরশিল্পীদের মানপত্র, বৃত্তি এবং পুরস্কার দিয়ে উৎসাহিত করতে হবে।

উপসংহার: কুটির শিল্প আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। এ শিল্পের সাথে আমাদের অর্থনীতির উন্নতি অবনতি জড়িত। বিশেষ করে গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণ হলো কুটির শিল্প। এর মাধ্যমে যেমন বেকার সমস্যা কমিয়ে আনা যায়, তেমনি দারিদ্র্য বিমোচন করা সম্ভব। এসব দিক চিন্তা করে কুটির শিল্পের পুনরুজ্জীবন ও প্রসার ঘটানো প্রয়োজন।