- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
খাদ্যে ভেজাল অথবা, সামাজিক দুরারোগ্য ব্যাধি: ভেজাল
ভূমিকা: ভেজাল আমাদের বর্তমান সমাজের একটি মারাত্মক সমস্যা। আমাদের দেশে এখন এমন কোনো কাজকর্ম বা জিনিস নেই, যেখানে ভেজাল নেই। খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুতেই এখন ভেজাল মেশানো হচ্ছে। ভেজাল এমনভাবে আধিপত্য বিস্তার করেছে যে, এখন আসল জিনিসের প্রতিও সন্দেহ সৃষ্টি হয়। কিছুসংখ্যক অসাধু, অর্থলোলুপ মানুষের জন্য আমাদের সমাজে ভেজাল সমস্যা দিন দিন প্রকট থেকে প্রকটতর হয়ে উঠছে।
খাদ্যে ভেজাল: জীবের বেঁচে থাকার জন্য উপযুক্ত খাদ্য গ্রহণ অপরিহার্য। কিন্তু সে খাদ্য যদি অনুপযুক্ত বা বিষাক্ত হয়, তাহলে জীবন নাশের সমূহ সম্ভাবনা থাকে। অথচ আমাদের ব্যবসায়ীমহল অর্থলালসা চরিতার্থ করার জন্য অবাধে খাদ্যে ভেজাল মেশাচ্ছে। কিন্তু তারা একটুও ভেবে দেখছে না যে, এতে ব্যক্তিগত লাভ হলেও জাতীয় ক্ষতিটা কতটুকু হচ্ছে। তারা অর্থের লোভে ভালো খাদ্যদ্রব্যের সাথে নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য মেশাচ্ছে, নিম্নমানের খাদ্য উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ছে, খাদ্যে কৃত্রিম ক্ষতিকারক ও বিষাক্ত উপাদান মেশাচ্ছে। তাদের এ অসৎ উপায়ে মান-নিয়ন্ত্রণহীনভাবে অখাদ্য-কুখাদ্য বাজারজাতকরণ করাকেই বলা হয় খাদ্যে ভেজাল।
খাদ্যে ভেজাল মেশানোর কারণ খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মূল কারণ অর্থলোভ। এ লোভ মানুষকে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য করে ফেলে। অর্থের লোভে মানুষ পশুতে পরিণত হয়। মানুষ হয়ে মানুষকে সরাসরি খুন করতে পারে। যারা খাদ্যে ভেজাল মেশায় তারাও পরোক্ষভাবে মানুষ খুন করে। তাদের খুনটা আরো মারাত্মক। কারণ তারা অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
অর্থলোভ ও অর্থলাভ থেকে জন্মে ক্ষমতার লোভ। আজকাল যার অর্থ আছে সেই ক্ষমতা দখলের জন্য রাজনীতির ব্যবসায় নামে। রাজনৈতিক ক্ষমতা পেয়েই তারা হয়ে ওঠে চরমভাবে বেপরোয়া। তখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে, নির্ভয়ে সে তার অসাধু ব্যবসায়, ভেজাল কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়। আত্মসংকীর্ণতা, অসততা, হিতাহিত জ্ঞানহীনতা, লোভ ও লালসা এসবের কারণেই অসৎ ব্যবসায়ীরা খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে থাকে।
খাদ্যে ভেজালের ধরন: বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে খাদ্যে ভেজাল মেশানো হয়ে থাকে। যেমন- ওজন বৃদ্ধির জন্য শস্যছোবড়া, ধুলোবালি বা ভালো খাদ্যশস্যের সাথে নষ্ট, পচা কীটপতঙ্গ আক্রান্ত খাদ্যশস্য মেশানো হয়। শুষ্ক খাদ্যশস্যের ওজন বৃদ্ধির জন্য অনেক সময় পানি ছিটিয়ে দিয়ে ওজন বৃদ্ধি করা হয়ে থাকে। এছাড়া ঘি-এর সাথে পশু চর্বি, তিল বা নারিকেল তেলের সাথে বাদাম তেল, সরিষার সঙ্গে শিয়াল কাঁটার বীজ, সয়াবিনের সাথে পামতেল ইত্যাদি মিশিয়ে ভেজাল সৃষ্টি করা হয়। আজকাল বাজারে খাঁটি দুধ যেন সোনার হরিণ। দুধের চেয়ে পানির পরিমাণই তাতে বেশি থাকে। আর গুঁড়ো দুধে মেশানো হয় ময়দা, সুজি ও অন্যান্য দ্রব্য। বর্তমানে গুঁড়ো দুধে বিষাক্ত মেলামাইন আতঙ্ক ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে।
খাদ্যে ভেজালের প্রভাব ও পরিণতি ভেজাল খাদ্যের প্রভাব যেমন মারাত্মক, তেমনি তার পরিণতিও অত্যন্ত ভয়াবহ। ভেজাল মিশ্রিত খাদ্য খেয়ে যে শিশু বড় হয়, সারাজীবন তাকে সেই ভেজালের খেসারত দিতে হয়। অনেক সময় বিষক্রিয়ার সাথে সাথেই তাদের মৃত্যু হয়। আবার বেঁচে থাকলেও নানা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হতে হয়। বিষাক্ত কেমিক্যাল মিশ্রিত খাদ্য খেয়ে মানুষ মরণব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, তাদের কিডনি ও লিভার নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, গলগণ্ড, পেটের পীড়া, টাইফয়েড প্রভৃতি রোগও ভেজাল খাদ্যের কারণে হয়ে থাকে। সবমিলে ভেজাল খাদ্য ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য জাতির জন্য এক মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।
ভেজাল প্রতিরোধে করণীয়: ভেজাল রোধ করার জন্য সরকার ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জোর তৎপরতা শুরু করেছে। খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল আমাদের ব্যক্তি জীবনকে যেমন বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তেমনি জনস্বাস্থ্যকে মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন করছে। কাজেই আমাদের ব্যক্তি তথা জাতীয় স্বার্থে ভেজাল প্রতিরোধ করা অত্যন্ত জরুরি। সেজন্য আমাদেরকে নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা উচিত।
- ভেজালবিরোধী জনমত ও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
- কঠোর আইন করে ভেজাল সৃষ্টিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
- ভ্রাম্যমাণ আদালত ও দ্রুত কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
- ভেজালবিরোধী অভিযান ও এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যাতে দুর্নীতি না করে সেজন্য তাদের প্রতিও কঠোর আইন ও তার কার্যকারিতা থাকতে হবে।
- পণ্যের মাননিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান 'বিএসটিআই' এর কার্যক্রম আরও গতিশীল ও স্বচ্ছ করতে হবে। সেজন্য অসৎ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
সর্বোপরি প্রশাসন ও জনগণকে ভেজাল প্রতিরোধে সর্বদা সচেতন ও সক্রিয় থাকতে হবে।
উপসংহার: খাদ্যে ভেজাল জাতীয় জীবনের এক মারাত্মক অভিশাপ। জাতিকে এ অভিশাপ থেকে অবশ্যই মুক্ত করতে হবে। আশার কথা যে, আমাদের দেশের মানুষ এখন এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হচ্ছে। তাছাড়া কিছুদিন যাবৎ ভেজালবিরোধী প্রশাসনিক কার্যক্রমও যথেষ্টভাবে চলছে। এভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে আমরা ভেজালমুক্ত হতে পারব বলে আশা করা যায়। আর সেটাই আমাদের সবার কাম্য।