• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

তোমার প্রিয় শিক্ষক অথবা, আমার প্রিয় শিক্ষক

ভূমিকা: প্রত্যেক শিক্ষকই ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে সমানভাবে শ্রদ্ধেয়। তবু ছাত্র-ছাত্রীর অন্তরে কোনো বিশেষ একজন শিক্ষক বা শিক্ষয়িত্রীর জন্য একটা বিশেষ প্রগাঢ় ভক্তি ও শ্রদ্ধা সঞ্চিত থাকে, সেটা কেউ প্রকাশ করতে পারে, আবার কেউ পারে না।

আমার প্রিয় শিক্ষক: আমার প্রিয় শিক্ষক হিসেবে আমি যাঁকে হৃদয়ের গভীরে স্থান দিয়েছি, তিনি হলেন আমাদের বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক জনাব বুলবুল চৌধুরী। আমি যখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র তখন তাঁর প্রথম সান্নিধ্য লাভকরি। তিনি ক্লাসে এসে প্রথমেই জিজ্ঞেস করতেন, আমরা কেমন আছি। আমাদের খোঁজখবর নিয়ে তারপর তিনি চেয়ারে বসতেন।

চুপচাপ বসে থাকতেন কতক্ষণ। কী যেন ভাবতেন। তারপর চেয়ার ছেড়ে টেবিলের সামনে এসে দাঁড়াতেন। শুরু করতেন গল্প। গল্পটি শেষ করতেন চলতি দিনের পড়ার সঙ্গে মিলিয়ে। মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিট আলোচনা করতেন পাঠ্যপুস্তকের পড়া। তাতেই আমাদের পড়া একেবারে মনের মধ্যে গেঁথে যেত। অন্য শিক্ষকদের চেয়ে তাঁর পড়ানোর কৌশলটা ছিল ভিন্ন এবং আকর্ষণীয়। তাঁর ক্লাসে কোনো ছাত্র-ছাত্রী টু শব্দটি পর্যন্ত করত না। গল্পের ভঙ্গিতে তাঁর এ 'পাঠদানের ভঙ্গিটাই ক্রমে ক্রমে আমার মনটাকে জয় করে নিল। তিনি এখনও আমাদের বাংলা পড়ান। আমার জানামতে শুধু অসুস্থতা ছাড়া তিনি কখনই ক্লাস বাদ দেন না।

গল্পের ভঙ্গিতে পড়ালেও তিনি নির্দিষ্ট সময়েই সিলেবাস শেষ করাতেন। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি তিনি বাইরের অনেক বিষয় ক্লাসে আলোচনা করেন। বিশিষ্ট মনীষীদের জীবনী, বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখকদের জীবনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তথ্যবহুলভাবে উপস্থাপন করতেন। এছাড়া তাঁর একটি বিশেষ দিক হল তিনি খুবই মিষ্টি করে রবীন্দ্রসংগীত গাইতে পারেন। তিনি আমাদের মাঝে মাঝেই গান গেয়ে শোনাতেন এবং বলতেন গান গাইলে এবং শুনলে মন ভালো থাকে। অর্থাৎ তিনি ক্লাসের পুরো সময়টাকে খুবই আনন্দময় করে তুলতে পারেন।

থানা/জেলাভিত্তিক সংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা হলে তিনি এ ব্যাপারে আমাদের উৎসাহ দিতেন এবং বিভিন্নভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেন। তাঁর এ ধরনের সহযোগিতার মনোভাব এবং বন্ধুভাবাপন্ন আচরণ আমার খুবই ভালো লাগে। মাঝে মাঝে তাঁকে শুধু একজন শিক্ষকই নয় একজন ভালো বন্ধুও মনে হয়। তাঁর এ সমস্ত গুণ আমাকে দারুণভাবে আকর্ষণ করে। এসব কারণেই ধীরে ধীরে বুলবুল স্যার হয়ে উঠলেন আমার প্রিয় শিক্ষক।

আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলি প্রগতিশীল দুনিয়ায় আদর্শ শিক্ষকের গুণাবলির যে পরিবর্তন সম্ভবপর, এরূপ ধারণা পোষণ করা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয়। গুণ ও নীতি আদর্শ সর্বকালে সর্ব অবস্থায় অপরিবর্তনীয়। তাঁর আদর্শ চরিত্র, কথা বলার ভঙ্গি, শিক্ষাদান পদ্ধতি এবং হৃদয়ের উষ্ণতা আমাকে দারুণভাবে মুগ্ধ করে। তিনি উত্তম বাচনভঙ্গিতে পরিষ্কারভাবে কথা বলেন। তিনি আমাদের সুখ-দুঃখের শরিক হন। তাঁর হাসিমুখের উপদেশ আমার ওপর অনপনেয় ছাপ রেখে যায়। আমি কোনো ভুল করলেও তিনি সহানুভূতির তা সংশোধন করে দিতেন। তিনি কখনই আমাদের সঙ্গে কর্কশ কণ্ঠে কথা বলতেন না। সবসময়ই তিনি পিতৃস্নেহের মতো আদর আর শাসন মিশিয়ে কথা বলতেন। এসবই তাঁকে আমার কাছে অধিক প্রিয় করেছে।

আদর্শ শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা আমাদের বর্তমান সমাজ থেকে স্নেহ-প্রীতি ও ভালোবাসা প্রায় লুপ্ত হতে চলেছে। সমাজের এ সংকটময় মুহূর্তে সুশিক্ষার জন্য আদর্শ শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রীর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সমাজে সকল প্রকার কুসংস্কারের মূল উৎপাটন করতে হলে আদর্শ শিক্ষকের প্রয়োজন। আদর্শ শিক্ষক ছাড়া সুশিক্ষা দান কোনো কালেও সম্ভব ছিল না, এখনও সম্ভব নয়।

শেষকথা: বুলবুল চৌধুরী শুধু আমার শিক্ষকই নন, তিনি আমার অকৃত্রিম বন্ধু, নির্ভুল উপদেষ্টা এবং আমার জীবন গড়ার কারিগর। তিনি নিজের ব্যক্তিত্বকে বিন্দুমাত্র ক্ষুণ্ণ করেন না। তাঁর মধ্যে আমি সত্য সুন্দরের পরম প্রকাশকে খুঁজে পেয়েছি। তিনি আদর্শ শিক্ষক। তিনি আমার ছাত্রজীবনে অপরিসীম প্রেরণার উৎস। আমার মনের মণিকোঠায় তিনি চিরদিন অম্লান হয়ে থাকবেন।