• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

ষড়ঋতুর বাংলাদেশ অথবা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অথবা, বাংলাদেশের ষড়ঋতু

ভূমিকা: 'ধনধান্যে পুষ্পে ভরা' এ বসুন্ধরার রূপবৈচিত্র্য পৃথিবীর আর কোথাও দেখা যায় না। বাংলার প্রকৃতিতে রূপ, রস, গন্ধ অবিরত রং বদলায়। ঋতুবৈচিত্র্যে বাংলার প্রকৃতি সাজে নানান সাজে। অফুরন্ত এ রূপ সর্বদা নব নব সাজে সজ্জিত হয়। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ বৈচিত্র্যময় দেশ কখনও ভৈরবী রূপ নেয়, কখনও বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, কখনও সজল কালো চোখ তুলে ভালোবাসার বান ছুঁড়ে দেয় প্রকৃতির সন্তানদের দিকে। কখনও কিশোরী মেয়ের মতো বাঁকা চোখে তাকায়, কখনও যৌবন রসে সিক্ত করে সবাইকে। জীবনানন্দের রূপসী বাংলার অফুরন্ত রূপ কখনও ফুরিয়ে যায় না।

রুদ্র গ্রীষ্ম: ঋতুরঙের প্রথম কুশীলব গ্রীষ্ম। ধু ধু রুক্ষ দুই চোখে প্রখর বহ্নিজ্বালা নিয়ে তার আবির্ভাব। সূর্যের প্রচন্ড শাসনে ধরিত্রীর বক্ষ বিদীর্ণ। প্রখর তপনতাপে আকাশ তৃষায় কাঁপে। সেই তৃষ্ণাকাতর বিরহের নিরুদ্ধ নিঃশ্বাস উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠে অপরাহে। আদিগন্ত মরুজ্বালার মধ্যে গ্রীষ্ম সন্ধ্যা যেন একটি শ্যামল স্নিগ্ধ মরূদ্যান। কালবৈশাখীর রুদ্রসুন্দর মূর্তি আকাশ মাটির দেহের উত্তাপ মুছে নিতে আসে শুশ্রুষার সুগভীর প্রতিশ্রুতির মতো। বাংলাদেশে গ্রীষ্মের ডালি ভরে ওঠে সুরসাল আম, জাম, কাঁঠালের প্রাচুর্যে। গ্রীষ্ম-ফুলের ঋতু নয়, ফুল ফোটাবার তাড়া নেই তার, শুধু ফলের ডালা সাজিয়েই নিঃশব্দে বিদায় নেয় সে।

নবীন বর্ষা: রূপসী বাংলার বুকে গ্রীষ্মের পর আসে শ্যামল সরস সজল নবীন বর্ষা। গ্রীষ্মের লেলিহান হোমশিখাকে আবৃত করে দূর দিগন্তে ধূসর আকাশের বুকে স্তরে স্তরে জমে ওঠে নবীন মেঘের স্তূপ। এক অপূর্ব সমারোহে আকাশ-বাতাস ব্যাপ্ত করে রাজ রাজেশ্বরের মতো আসে বর্ষা। বর্ষমঞ্চের দ্বিতীয় কুশীলব সে। বর্ষা বাংলাদেশের সবচেয়ে জীবন্ত ঋতু। মুহুর্মুহু বিদ্যুৎ বিকাশ ও গুরুগম্ভীর বজ্রনিনাদের 'অতি ভৈরব হরষে'র মধ্যে সূচিত হয় তার শুভাগমন।

অমল ধবল শরৎ: বৈচিত্র্যময় রূপৈশ্বর্যের রানী বাংলার তৃতীয় ঋতু শরৎ। অমল ধবল পালে ছন্দ মধুর হাওয়া লাগিয়ে : প্রকৃতিতে আবির্ভাব ঘটে শরতের। বর্ষণক্লান্ত মেঘ তার বারিবর্ষণ মুছে ফেলে লঘুতর রূপ গ্রহণ করে- অলস মন্থর গতিময় ছন্দে আকাশের একাংশ শূন্য করে অন্য অংশে ভেসে যায়। বর্ষার প্রকৃতিকে ধুইয়ে শুদ্ধ কোমল রূপকান্তিতে সাজিয়ে দিয়ে যায়। আর শরৎব্রানী আলো-আঁধারির লুকোচুরির খেলায় নিজেকে আকণ্ঠ নিমজ্জিত রাখে। কাশফুলের শুভ্রতায় প্রকৃতিতে শান্তির পরশ লাগে। শিউলি ফুলের মন উদাস করা গন্ধ ভালোবাসা জাগিয়ে দেয়। ভোরের শিশিরের কোমলতা নিয়ে প্রকৃতি মানবমনে সুখের পরশ বুলিয়ে দেয়।

সুমঙ্গলা হেমন্ত: শরৎত্রানীর বিদায় বার্তা ঘোষিত হতেই হিমের ঘন ঘোমটায় মুখ ঢেকে হেমন্ত এসে উপস্থিত হয়। সে বঙ্গ ঋতুনাট্যের চতুর্থ কুশীলব। হেমন্তের নেই শরতের বনৈশ্বর্য, আছে সুদূর ব্যাপ্ত এক বৈরাগ্যের বিষণ্ণতা। সে যেন ফসল ফলাবার নিঃসঙ্গ সাধনায় থাকে নিমগ্ন। খেতে খামারে রাশি রাশি ভারা ভারা সোনার ধান উঠতে থাকে। চারদিকে অন্তহীন কর্মব্যস্ততা। ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব।

হাড় কাঁপানো শীত: হেমন্তের প্রৌঢ়ত্বের পর আসে জরাগ্রস্ত শীতের ধূসর বার্ধক্য। শুষ্ক কাঠিন্য, পরিপূর্ণ রিক্ততা ও দিগন্তব্যাপী সুদূর বিষাদের প্রতিমূর্তি সে। তার তাপ বিরল রূপমূর্তির মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকে এক মহামৌনী তপস্বীর তপশ্চর্যা এবং অনন্ত বৈরাগ্যের ধূসর অঙ্গীকার। বিবর্ণ কানন বীথির পাতায় পাতায় নিঃশেষে ঝরে যাবার নির্মম ডাক এসে পৌছায়। এক সীমাহীন রিক্ততায় অসহায় ডালপালাগুলো একদিন হাহাকার করে কেঁদে ওঠে। তাকে সব দিয়ে দিতে হয়, দিয়ে যেতে হয়। ওদিকে ধান কাটা মাঠে কী সীমাহীন শূন্যতা, বিশাল কারুণ্য। ত্যাগের কী অপরূপ মহিমা! হেমন্তে যে নবান্নের উৎসব শুরু হয়, তার অবসান ঘটে হাড়কাঁপা শীতের শাসানিতে। শীতের আগমনের সাথে সাথে প্রকৃতির ওপর যে শাসন ও শোষণ শুরু হয়ে যায়, তাতে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক সৌন্দর্য হারিয়ে রুক্ষ হয়ে ওঠে।

ঋতুরাজ বসন্ত: সর্বশেষ ঋতু বসন্ত। সে ঋতুরাজ। রাজার মতোই ঐশ্বর্য, বৈভব আর বর্ণবিভাস নিয়ে তার সদর্প আগমণ। সে আসে নবীন প্রাণ, উৎসাহ, নবীন উদ্দীপনা আর যৌবনের সঞ্জীবনী নিয়ে। তার উদ্দীপ্ত স্পর্শে গাছে গাছে জেগে ওঠে কিশলয়। পাখির বিচিত্র কলকাকলিতে চারদিক মুখরিত হয়ে ওঠে। অশোক, পলাশের রঙিন বিহবলতায় ও শিমুল কৃষ্ণচূড়ার বিপুল উল্লাসে, মধুমালতী ও মাধবী মঞ্জরির উচ্ছল গন্ধমদির প্রগলভতায় লেগে যায় এক আশ্চর্য মাতামাতি।

উপসংহার: রূপসী বাংলার এই ঋতুরঙ্গমালা নানা বর্ণ, গন্ধ, গানের সমারোহে নিত্য আবর্তিত হয়ে চলে। ষড়ঋতুর রঙ্গমঞ্চে এমনি করে প্রতিটি ঋতু যুগ যুগ ধরে অভিনয় করে যাচ্ছে। একের পর এক তাদের আগমন ও অন্তর্ধান বাঙালির প্রাণে রং ধরায়। এই ঋতুচক্রের অবদানেই আমাদের বাংলাদেশ হয়েছে সুজলা, সুফলা, শস্যশ্যামলা এবং অরণ্যকুন্তলা।