• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্য অথবা, বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

ভূমিকা: প্রকৃতির লীলাক্ষেত্র আমাদের এই রূপসী বাংলাদেশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়, জলপ্রপাত ও বনভূমি এদেশকে করে তুলেছে অপূর্ব রূপময়। আবার পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, তিস্তা, কর্ণফুলী, যমুনা প্রভৃতি নদ-নদী এর সমভূমি অঞ্চলকে করেছে শস্যশ্যামলা ও অপরূপ সৌন্দর্যের অধিকারী। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এদেশে যুগে যুগে এসেছেন বহু বিদেশি পর্যটক, কবিরা লিখেছেন কবিতা।

ভূপ্রকৃতি: বাংলাদেশকে প্রকৃতির সুরমা লীলাক্ষেত্র বললে মোটেই অত্যুক্তি হয় না। পাহাড় টিলার রমণীয় শোভা, গাছপালা ও তৃণগুল্ম শোভিত বনের মনোরম দৃশ্য, কলনাদিনী নদনদীর অপরূপ সৌন্দর্য, শ্যামল শোভাময় ফসলের ক্ষেত- সবই এদেশের সুন্দর ও অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

জলবায়ু ও ঋতুপ্রকৃতি: বাংলাদেশের এই যে এত সৌন্দর্য এর পেছনে কাজ করছে অনুকূল জলবায়ু। জুন মাসের শুরুতে বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণ আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে বয়ে যায় এবং পূর্ব ও উত্তরের পাহাড়ি এলাকায় বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। তখন এখানে বর্ষার ছোঁয়া পেয়ে প্রকৃতি এক অভিনব রূপ ধারণ করে। নদ-নদী কানায় কানায় পানিতে ভরে যায়। মাঠে মাঠে শস্য উৎপাদনের আয়োজন চলতে থাকে। হাঁস দল বেঁধে আনন্দে সাঁতার। কাটতে থাকে। ছোট-বড় মাছ ঝাঁকে ঝাঁকে ছোটাছুটি করতে থাকে। শাপলা, কুমুদ প্রভৃতি ফুল ফুটে অপূর্ব সৌন্দর্য ধারণ করে। গ্রীষ্মের দাবদাহ বর্ষার বর্ষণে অনেকটা কমে যায়। এ সময় পাট ও আউশ ধানের খেতগুলো সবুজে ভরে যায়।

বর্ষার পরে আসে শরৎকাল। তখন গ্রীষ্মের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে। শরতের চাঁদনি রাতে বনের গাছপালা, নদী-তীরের কাশবন, গৃহস্থের কুটির, গতিশীল নদীস্রোত নতুন নতুন রূপে আমাদের চোখে ধরা দেয়। নানা রকমের ফুল ফোটে। শরতের শেষে কিছুটা শীতের আমেজ শুরু হয়। এর ফাঁকে চলে আসে হেমন্তকাল। সোনালি ধানে মাঠকে মাঠ ভরে যায়। ফসলের সওগাত গৃহস্থের ঘরে ঘরে তুলে দিয়ে' ধরণি এক সময় রিক্ত হয়। তখন আসে শীতকাল। সেসময় বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। তীব্র শীত অনুভূত হয় এবং শ্যামল প্রকৃতি যেন বুড়োদের মতো শীর্ণমূর্তি ধারণ করে। এরপর একটা সময় আসে যখন শীত ও গ্রীষ্মের মিশ্র আমেজ অনুভূত হয়। আসে বসন্তকাল। গাছপালা ও তরুলতায় নতুন পাতা গজায় এবং বিচিত্র রঙের ফুল ফোটে। প্রকৃতি যেন নতুন সৌন্দর্যে তার যৌবন ফিরে পায়।

বিভিন্ন দৃশ্য: বাংলাদেশ গ্রামপ্রধান দেশ। তার প্রতিটি গ্রাম যেন প্রকৃতির এক অপূর্ব রঙ্গশালা। যেদিকে চোখ যায়-অবারিত সবুজ মাঠ, ফুলে-ফলে ভরা গাছপালা, তৃণগুল্ম শোভিত বন-বনানী ও শ্যামল শস্যখেত। কোথাও প্রকৃতির সবুজ ঘোমটা ভেদ করে পাকা শস্যের সোনালি সুন্দর মুখ, আবার কোথাও বিশালদেহ বটবৃক্ষ প্রান্তরের এক স্থানে দাঁড়িয়ে সুশীতল ছায়া দিয়ে পথিকের ক্লান্তি দূর করছে। কোথাও তাল গাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে, আবার কোথাও দিঘির কাকচক্ষু কালো পানিতে লাল সাদা শাপলা ও কুমুদ ফুটে অপরূপ সৌন্দর্য বিস্তার করছে। বাংলাদেশের এই সৌন্দর্য বৈচিত্র্য সবার মন আনন্দে ভরিয়ে দেয়।

পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, শীতলক্ষ্যা, কর্ণফুলী, তিস্তা প্রভৃতি নদনদী বাংলাদেশের সমভূমি এলাকাকে শস্যশ্যামল করে তাকে সোনার দেশের গৌরবে ভূষিত করেছে। বাংলাদেশের প্রকৃতির মতো, এমন অপরূপ সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথায়ও দেখা যায় না।

উপসংহার: বাংলাদেশ ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ। ষড়ঋতুর খেলা চলে এদেশে। প্রতিটি ঋতুতে এদেশ নতুন নতুন রূপ ধারণ করে। নতুন আনন্দ আর সৌন্দর্যে আমাদের মন ভরিয়ে দেয়। বাংলাদেশের মতো মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই।