- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
বিদ্যুৎ ও আধুনিক জীবন অথবা, বিদ্যুৎ ও বর্তমান সভ্যতা
ভূমিকা: আধুনিক যুগ বিজ্ঞানের যুগ। আর বিদ্যুৎ বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। মানবসভ্যতার বিকাশে বিদ্যুৎ অপরিহার্য শক্তি। বিদ্যুৎশক্তি এ যুগের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চাকাকে শুধু সচল করেছে তাই নয়, তাকে দিয়েছে গতিবেগ ও সমৃদ্ধি। আধুনিক বিশ্বে বিদ্যুৎ ছাড়া কোনো কর্মযজ্ঞই সম্পন্ন হতে পারে না। অপরিমেয় বিদ্যুৎশক্তির সাহায্যেই পাশ্চাত্য দেশগুলো অতুল শক্তি ও সম্পদের অধিকারী হয়েছে, সারা পৃথিবীতে তারা কর্তৃত্ব করছে। বৈজ্ঞানিক ভোল্টার 'বিদ্যুৎশক্তি' আবিষ্কার করে মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক কালজয়ী অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। বিদ্যুতের ঐন্দ্রজালিক শক্তি মানবজীবন ও সভ্যতার চেহারা পাল্টে দিয়েছে। গোটা বিশ্বকে এনে দিয়েছে মানুষের নিয়ন্ত্রণে।
সভ্যতার ক্রমবিকাশে বিদ্যুৎ আধুনিক, সভ্য ও উন্নত জীবনের সর্বক্ষেত্রে বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বিদ্যুৎ আবিষ্কারের ফলেই মানুষের সুখ-সমৃদ্ধি বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, সমাজের নব নব বিকাশের পথ হয়েছে প্রশস্ত। আধুনিক শিল্প ও সভ্যতার প্রাণশক্তিই হচ্ছে এই বিদ্যুৎ। সভ্যতার বিকাশে ও অর্থনৈতিক উন্নতিতে বিদ্যুতের অবদান অকল্পনীয়। বিদ্যুৎ ছাড়া একটি মুহূর্তও কল্পনা করা যায় না।
অসাধ্য সাধনে বিদ্যুৎ: বিদ্যুৎ একটি শক্তি এবং সে শক্তি সত্যিই অকল্পনীয় বা অপরিমেয়। এ অমিত শক্তির ফলেই বিদ্যুৎ আজ বিশ্বকে জয় করেছে। সকল দুরূহ কার্যসম্পাদনে বিদ্যুৎ সাফল্য এনেছে। হাজার হাজার জনশক্তি যে কাজ করতে শত সহস্র কর্মঘণ্টা ব্যয় হয়। বিদ্যুৎ মারফত সে কাজ একটা সুইচ টিপে একজন মানুষই তা নিমেষে করে দিচ্ছে।
দৈনন্দিন জীবনে বিদ্যুতের ব্যবহার: আমাদের প্রতিদিনকার কাজকর্ম, সে গ্রামীণ জীবন থেকে শুরু করে শহরের যান্ত্রিক জীবন পর্যন্ত ব্যাপ্ত যাপিত জীবনে বিদ্যুৎ এক অপ্রতিহত গতিতে রাজত্ব করে চলেছে। বিদ্যুতের বাতি জ্বালানো, পানি সরবরাহের মেশিন চালানো, গ্রামীণ জীবনে সেচকার্যের জন্য পাম্প চালানো, বিনোদনের জন্য টিভি, রেডিও, টেপরেকর্ডার চালানো, ভিসিআর, ভিসিডি চালানো প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ এক অপরিহার্য শক্তি।
শহরের মানবিক জীবনে মুহূর্তের বিদ্যুতের অনুপস্থিতি সমস্ত পরিবেশকে ভূতুড়ে পরিবেশের আবেশে আচ্ছন্ন করে ফেলে। মানুষ হাঁপিয়ে ওঠে। নিঃশ্বাস ফেলতেও কষ্ট বোধ করে। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ প্রভৃতিকে আলোকিত করতে, অনুষ্ঠানাদিতে ঘরদোর, দোকানপাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আলোকমালায় সজ্জিত করতে বিদ্যুৎ অপরিহার্য। অফিস-আদালতে, খবরের কাগজের অফিসে বিদ্যুতের সর্বাধিক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। রান্নাঘরের কাজেও বিদ্যুতের ব্যবহার কম নয়। রান্নার জন্য রয়েছে কুকিং রেঞ্জ, মসলাবাটা ও নানা খাদ্য গুঁড়া করার মেশিন, রয়েছে বাসন ও কাপড় ধোয়ার যন্ত্র- এগুলো চালনা করতে বিদ্যুৎ প্রয়োজন হয়। ধনীদের গৃহে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চলে বিদ্যুতের সাহায্যে। বিদ্যুতের গুরুত্ব ও উপযোগিতা সম্বন্ধে আজ আর কারও মনে সংশয় নেই।
শিল্পোন্নয়নে বিদ্যুৎ: শিল্পোৎপাদন, কৃষিকাজ, মুদ্রণ শিল্প, সংবাদ আদান-প্রদান, যানবাহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা, শিক্ষাক্ষেত্র সর্বত্রই বিদ্যুতের যোগান চাই। শিল্পোন্নয়ন ছাড়া আধুনিক উন্নত জীবনযাপন সম্ভব নয়। কিন্তু শিল্পের উন্নয়ন করতে হলে সর্বাগ্রে প্রয়োজন বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ ছাড়া শিল্পকারখানা চলতে পারে না। আর শিল্পোৎপাদন বন্ধ হলে অত্যাধুনিক জীবনযাপনও সম্ভব নয়। কেননা শহুরে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক কিছুই শিল্পকারখানার ফসল। তাই শিল্পোন্নয়ন ও উন্নত জীবনের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের অবদান অনস্বীকার্য।
জীবনকে গতিশীল করতে বিদ্যুৎ: মানবজীবনে গতিশীলতা একান্ত কাম্য। গতিহীন জীবন মৃতের শামিল। এক্ষেত্রে বিদ্যুতের বিস্ময়কর অবদান অনস্বীকার্য। অবশ্য এটি ঠিক যে, বিদ্যুৎ মানুষের সময় ও শ্রমকে সহস্র গুণে কমিয়ে দিয়েছে। বিদ্যুতের কল্যাণেই মানুষ এখন একশ জনের কয়েক দিনের কাজকে একটিমাত্র সুইচের খাঁরা কয়েক সেকেন্ডে বা মিনিটে করে দিচ্ছে। বিদ্যুৎ মানুষকে তাই গতিশীলতা দিয়েছে একথা স্বীকার করতেই হয়।
বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা: আধুনিক জীবন বিদ্যুৎনির্ভর। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, সকাল থেকে পরের দিন সূর্যোদয় পর্যন্ত বিদ্যুৎশক্তির একচেটিয়া আধিপত্য আমরা প্রত্যক্ষ করি। গৃহকোণ থেকে শুরু করে অফিস-আদালত, কলকারখানা, যানবাহন সবই বিদ্যুৎনির্ভর এমনকি বিজ্ঞানের সবচেয়ে বিস্ময়কর অবদান কম্পিউটারও বিদ্যুৎ ছাড়া কতকগুলো কলকব্জা বৈ আর কিছুই নয়। কিন্তু বিদ্যুতের ছোঁয়া পেলেই সে জীবন্ত কম্পিউটার। বিদ্যুতের অভাব হলে দেশে দেশে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়, এমনকি কৃষিও বন্ধ হয়ে যায়। দেশের শিল্পায়নের প্রথম শর্ত বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ। আর শিল্পায়ন ছাড়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। অথচ এই শিল্পায়নের প্রথম থেকে শেষ অবধি চাই বিদ্যুৎ এবং নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ।
উপসংহার: আধুনিকতম জীবন ব্যবস্থায়, মানুষের যাপিত জীবনযাত্রায় বিদ্যুৎ এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব রাখছে। মানবজীবনের প্রতিটি ছন্দে স্পন্দন দিচ্ছে বিদ্যুৎ। বিদ্যুতের মোহময় পরশ ছাড়া জীবনের চলমানতা, গতিশীল ছান্দিক পদচারণা, সকল কাজকাম, বিনোদন, আরাম-আয়েশ, কোনোকিছুই সম্ভব হতো না, সবকিছুই সম্ভব হচ্ছে অসীম ক্ষমতার আধার এ বিদ্যুতের কল্যাণে। আমাদের মানবসভ্যতার এ লগ্নে, আমরা এতটাই বিদ্যুৎনির্ভর হয়ে পড়েছি যে, কোনো কাজই আমরা এখন বিদ্যুতের সাহায্য ছাড়া করতে পারি না। বিদ্যুৎকে বাদ দিয়ে কোনো উচ্চ জীবন বা অভিলাষকে চরিতার্থ করতে পারছি না। তাই বিদ্যুৎ সম্পর্কে বলা হয়, "Electricity is the key to Human Civilization."