- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
সাম্প্রতিককালের জনপ্রিয় খেলা ক্রিকেট অথবা, তোমার প্রিয় খেলা
ভূমিকা: বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। ক্রিকেটের মতো একটি রাজকীয় খেলায় বাংলাদেশের প্রবেশ, উত্থান এবং অগ্রযাত্রা বিস্ময়কর। এ খেলার জন্ম হয়েছে ইংল্যান্ডে আজ থেকে প্রায় সাতশ বছর আগে। ক্রিকেটের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা, দেশবাসীর সহযোগিতা এবং সর্বোপরি খেলোয়াড়দের অদম্য আগ্রহের কারণে বাংলাদেশ আজ ক্রিকেট বিশ্বে একটি পরিচিত নাম।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের পূর্ব ইতিহাস বাংলাদেশে ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল স্বাধীনতা পূর্বকালে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্য নীতির কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেটে তেমন কোনো পৃষ্ঠপোষকতা পায়নি। পৃষ্ঠপোষকতা না পেলেও বাংলাদেশের লোকেরা বসে থাকেনি। তারই ফলস্বরূপ বাংলাদেশ আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমে বিশ্বকাপ ক্রিকেট 'পরিবারের সদস্য পদ এবং ক্রিকেটের অভিজাত পরিবারের মর্যাদা 'টেস্ট স্ট্যাটাস' লাভ করেছে।
বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ও সফলতা: ১৯৭৬ সালের ২৬ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা আইসিসি-র সহযোগী সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মতো ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত প্রথম আইসিসি'তে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ তার আগমন বার্তা জানিয়ে দেয়।
১৯৯৭ সালে আইসিসি'র ষষ্ঠ আসর বসে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে। ২৪ মার্চ থেকে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত আইসিসি ট্রফি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ। মোট ১০টি খেলার প্রথম রাউন্ডে আর্জেন্টিনা, পশ্চিম আফ্রিকা, ডেনমার্ক, আরব 'আমিরাত ও মালয়েশিয়াকে পরাজিত করে। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রথম ম্যাচে জয়ী হয়ে, দ্বিতীয় ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের সাথে পয়েন্ট ভাগাভাগির পর শেষ ম্যাচে হল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে ওঠে। সেমিফাইনালে ৭২ রানে স্কটল্যান্ডকে পরাজিত করে ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। ১৩ এপ্রিল মালয়েশিয়ার কিলাত ক্লাব মাঠে অনুষ্ঠিত ফাইনাল খেলায় শক্তিশালী কেনিয়াকে ২ উইকেটে পরাজিত করে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে এবং বিশ্বকাপ ক্রিকেট আসরে স্থান করে নেয়।
ওয়ানডে স্ট্যাটাস ও বাংলাদেশ: বাংলাদেশ ওয়ানডে স্ট্যাটাসের জন্য বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক আইসিসি'র কাছে জোর দাবি জানায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশকে ওয়ানডে স্ট্যাটাস প্রদান করা হয়।
বিশ্বকাপ ও বাংলাদেশ: আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের মূলপর্বে অংশগ্রহণ করে ১৯৯৯ সালে। একদিনের ক্রিকেটের এই সর্ববৃহৎ আসরে নবাগত বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শক্তিশালী টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলোর সঙ্গে খেলতে হয়েছিল। বাংলাদেশ দলের প্রতিপক্ষ দেশগুলো ছিল শক্তিশালী পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও নবাগত স্কটল্যান্ড। এ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দুটি খেলায় জয়লাভ করে।
প্রথম বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য: ৩১ মে ছিল বাংলাদেশের জন্য এক অগ্নিপরীক্ষার দিন। এ দিনে প্রতিপক্ষ ছিল সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। টসে জিতে পাকিস্তান ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ২২৩ রান তুলতে সক্ষম হয়। পরে পাকিস্তান ব্যাট করতে নেমে ৪৪ দশমিক ৪ ওভারে ১৬১ রানে সবাই আউট হয়ে যায়। নাইমুর রহমান দুর্জয়ের বলে পাকিস্তানের সর্বশেষ উইকেটে দাঁড়ানো সাকলাইন মোস্তাক রানআউট হওয়ার সাথে সাথে ইনিংস শেষ হয় এবং ৬২ রানের ব্যবধানে বাংলাদেশ জয়লাভ করে।
টেস্ট ক্রিকেট ও বাংলাদেশ ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ টেস্ট স্ট্যাটাস-এর জন্য আইসিসি'র কাছে দাবি জানিয়ে আসছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ড 'এ' দলসহ বেশ কয়েকটি দল বাংলাদেশ সফরে আসে। তারা বাংলাদেশের সাথে বেশ কয়েকটি 'ওয়ানডে', ৩ দিনের ও ৪ দিনের ম্যাচে অংশ নেয়। এ খেলাগুলোর ফলাফল, বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবস্থা ও অবকাঠামোগত সম্ভাবনাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে আইসিসি ২০০০ সালের ২৬ জুনের সভায় সব টেস্ট প্লেয়িং দেশের সমর্থনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে টেস্ট স্ট্যাটাস প্রদান করে। ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয় টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
উপসংহার: ক্রিকেট বিশ্বে বাংলাদেশ অপেক্ষাকৃত নতুন হলেও ইতোমধ্যেই সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রথম বিশ্বকাপের সাফল্যকে প্রেরণা হিসেবে নিয়ে অগ্রসর হলে একদিন বিশ্বকাপ জয় করতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ।