• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

বৃক্ষরোপণ অভিযান অথবা, বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা: পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও জীবজগৎকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মানুষ ভূমিষ্ঠ হয়েছিল স্নিগ্ধ শ্যামল অরণ্যের কোলেই। অরণ্য তার অবারিত শ্যামল ছায়া বিস্তার করে তাকে সূর্যের প্রখর দহন জ্বালা থেকে রক্ষা করেছিল। তার ক্ষুধার্ত মুখে অরণ্যই দিয়েছিল খাদ্য, প্রকৃতির নানা বিরুদ্ধ শক্তির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য দিয়েছিল নিরাপদ আশ্রয়। কাজেই বৃক্ষকে টিকিয়ে রাখা, নতুন নতুন বৃক্ষ রোপণ করা, প সংরক্ষণের জন্য বনায়নের ব্যবস্থা করা আমাদের অপরিহার্য কর্তব্য। পরিবেশ

বৃক্ষের গুরুত্ব: অরণ্য হনন যে আত্মহননের নামান্তর, অরণ্য হননের ফলে যে একদিন জলহীন ছায়াহীন মরুভূমি নেমে আসবে এবং তাতে যে মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে, সেই শুভবোধ আজ মানুষের মনে জাগ্রত হচ্ছে। বৃক্ষরোপণ অভিযান সেই শুভবোধের আনন্দময় প্রকাশ। বৃক্ষ আমাদের নানাবিধ প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বৃক্ষ আমাদের পাকা ফল, জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য, বস্ত্র তৈরির সুতা, বাসগৃহ তৈরির উপকরণ, আসবাবপত্র তৈরির কাঠ, জ্বালানি ইত্যাদি দিয়ে থাকে। তাছাড়া বনজ সম্পদ দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে। এমনকি বৃক্ষ দেশের পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা করে। মোটকথা, বৃক্ষ ছাড়া মানবজীবন অচল।

বাংলাদেশে বনের অবস্থা বৃক্ষের সীমাহীন গুরুত্বের পরিপ্রেক্ষিতে বিবেচনা করা হলে বাংলাদেশে বনের অবস্থা নৈরাশ্যজনক। বাংলাদেশের বিখ্যাত সুন্দরবন দীর্ঘ ঐতিহ্যের পরিচায়ক। ভাওয়াল, মধুপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বনাঞ্চল রয়েছে। কিন্তু ব্যাপকভাবে ও অপরিকল্পিত উপায়ে বনের গাছপালা কেটে ফেলায় দেশের সামগ্রিক বনাঞ্চল কমে যাচ্ছে। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য দেশের আয়তনের এক-চতুর্থাংশ বনাচ্ছাদিত থাকার কথা। কিন্তু দেশে বর্তমানে মোট ১৬.৪৬ শতাংশ বনভূমি রয়েছে। তাছাড়া প্রতিনিয়ত প্রচুর বনজ সম্পদ বিনষ্ট করে ফেলা হয়।

পরিবেশ সংরক্ষণে বৃক্ষ: পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য বাংলাদেশে বৃক্ষরোপণের প্রয়োজন আছে। আমাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য বনায়ন বৃদ্ধি করা উচিত। তা না হলে আমরা গ্রিন হাউস অ্যাফেক্ট-এর করাল গ্রাস থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারব না। অক্সিজেন আমরা পেয়ে থাকি বৃক্ষ বা বনভূমি থেকে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য যে পরিমাণ অক্সিজেনের প্রয়োজন,' সে পরিমাণ অক্সিজেন মেটানোর মতো বনভূমি আমাদের নেই। তাই বনভূমি বাড়ানো একান্ত প্রয়োজন।

বনভূমি ও মানবজীবন মানবজীবন ও অরণ্যজীবন- প্রাণের' এই দুই মহান প্রকাশের মধ্যে বাজে একটিমাত্র ছন্দ। ঋতুচক্রের আবর্তনের পথে উভয়ের একই স্পর্শকাতরতা। বসন্তের দক্ষিণ বাতাসে মানুষ তার হৃদয়ের আনন্দানুভূতি চিত্রে, সংগীতে কিংবা কবিতায় প্রকাশ করে। আর অরণ্য তার বাসন্তী বেদনা প্রকাশ করে অশোক, পলাশ, আর কৃষ্ণচূড়ার রক্তিম প্রগলভতায়। উভয়ের আদান-প্রদানের সম্পর্কও অতি নিবিড়। আজ আর বনভূমি ধ্বংস নয়, বনভূমি সৃজনই প্রয়োজন।

বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সফল করার উপায়: বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করতে হলে প্রয়োজন পুরাতন গাছ নির্বিচারে না কাটা এবং নতুন গাছের চারা লাগানো। নতুন করে গাছ লাগাতে বা রোপণ করতে হলে প্রয়োজন চারার। সব ধরনের গাছের চারা সংগ্রহ করা খুবই কঠিন কাজ। সরকার যদি এই চারা সংগ্রহ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতরণ করে, তা হলে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি সফল করা সম্ভব। তাছাড়া গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে জনসাধারণকে সচেতন ও উৎসাহিত করতে হবে।

উপসংহার: বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিকে সফল করার জন্য আমাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন প্রতি বছর গাছ লাগানো এবং যত্নের সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ করা। ফলে গাছ থেকে আমাদের প্রয়োজন মেটাতে পারব, আমরা গ্রিন হাউস অ্যাফেক্ট থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে পারব এবং পরিবেশগত ভারসাম্য ও প্রাকৃতিক অবক্ষয় থেকে মাতৃভূমিকে রক্ষা করতে পারব।