• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

শ্রমের মর্যাদা অথবা, পরিশ্রমের মর্যাদা

ভূমিকা: আজকের সভ্যতার এ চরম বিকাশের মূলে আছে যুগ-যুগান্তরের লক্ষ-কোটি মানুষের অফুরন্ত শ্রম। বহু মানুষ তাদের শ্রম দান করে তিলে তিলে গড়ে তুলেছে সভ্যতার এই অনবদ্য তিলোত্তমা মূর্তি। তাদের নাম ইতিহাসে লেখা নেই। সকলের শ্রমের যৌথ প্রয়াসে সম্ভব হয়েছে সভ্যতার এ-অনবদ্য বিকাশ। সভ্যতা মানুষের শ্রমেরই সম্মিলিত যোগফল।

শ্রমের গুরুত্ব: মানবজীবনে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। শ্রম প্রধানত দুই প্রকার দৈহিক বা কায়িক শ্রম ও মানসিক শ্রম। জীবনের উন্নতির চাবিকাঠি পরিশ্রমের মধ্যে বিদ্যমান। শ্রমের এই অপরিসীম গুরুত্ব বিবেচনায় শ্রমের মর্যাদা দিতে হবে। উন্নত দেশগুলোর দিকে লক্ষ করলে দেখা যাবে যে, শ্রমের প্রতি তারা মর্যাদাশীল বলে তাদের উন্নতি এত ব্যাপক হয়েছে। সেসব দেশে ছোট-বড় বলে কোনো পার্থক্য নেই। কাজ যাই হোক না কেন, তাতে কোনো অমর্যাদা নেই। কায়িক বা দৈহিক পরিশ্রমে সেসব দেশে কখনো কোনো অগৌরব হয় না।

ভাগ্যরচনা ও প্রতিভা বিকাশে শ্রম: মানুষ একদিকে যেমন সভ্যতার স্রষ্টা, অন্যদিকে তেমনি নিজের ভাগ্যেরও নির্মাতা। প্রত্যেক মানুষের মধ্যেই আছে সুপ্ত প্রতিভা। পৃথিবীতে যেসব ব্যক্তি প্রতিভাবান বলে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে আছেন, তাঁরা আজীবন কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং তার ফলে তাঁদের প্রতিভা ফুলের মতো বিকশিত হয়ে পৃথিবীকে বিতরণ করেছে অনাবিল সৌরভ।

শ্রম ও জাতিভেদ: সমাজের উন্নতি বিধানের জন্য সব মানুষেরই নিজ নিজ শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী পরিশ্রম করা উচিত। কিন্তু সব মানুষের পক্ষে সমাজের সব কাজ করে ওঠা সম্ভব নয়। সামাজিক বিশৃঙ্খলা পরিহার করার জন্য মানুষ করেছে কর্মের নানা শ্রেণিবিভাগ। এই শ্রেণিবিভাগের পরিণামে সমাজে এসেছে ঘৃণিত জাতিভেদ প্রথা। পৃথিবীর সব দেশেই এই কর্মভিত্তিক, শ্রমভিত্তিক জাতিভেদ প্রথা ছিল। তাতে মানুষকে করা হয়েছে ঘৃণা, মানবতার ঘটেছে চরম অবমাননা।

শ্রমিক লাঞ্ছনা: সমাজের উঁচুস্তরের লোকেরা গ্রহণ করেছে গৌরবের কাজ। সমাজের সমস্ত সুখ-সুবিধা নিজেদের কাছে কুক্ষিগত করে তারা তথাকথিত নিম্নশ্রেণির মানুষদের নিক্ষেপ করেছে ঘৃণা ও বঞ্চনার অন্ধকারে। অথচ সেই শ্রমিকেরা চিরকাল মাঠে মাঠে বীজ বুনেছে, ফলিয়েছে সোনার ফসল, তাঁতি তাঁত বুনেছে, জেলে ধরেছে মাছ। অথচ স্বার্থপর সমাজের কাছ থেকে তারাই পায়নি মানুষের মর্যাদা।

শ্রমের জয়: শ্রমিক সমাজ বহু সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মানবিক শ্রমকে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছে। দেশে দেশে আজ শ্রমিক সংঘ এবং শ্রমিক কল্যাণ স্বীকৃতি লাভ করেছে। উপেক্ষিত এই শ্রমকে তার যোগ্য সম্মান না দিলে যে সমাজের উত্থান নেই, অগ্রগতি নেই- একথা আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃতি লাভ করেছে।

বাংলাদেশে শ্রমের স্থান: বাংলাদেশে শ্রমবিভাগ ছিল প্রধানত বর্ণগত। যারা উঁচু বর্ণের তারা কোনো কাজ করত না। নিচু বর্ণের লোকেরা দৈহিক বা কায়িক পরিশ্রমের কাজ করত। তাতে সমাজে একটা ধারণা জন্মেছিল যে, যারা শারীরিক পরিশ্রম করে তারা সমাজে সম্মানের পাত্র নয়। এটাই আমাদের অবনতির মূল কারণ।

শ্রমের সুফল: পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি পরিশ্রমী, সে জাতি ও দেশ তত উন্নত। পৃথিবীর মানুষ হিসেবে সব কাজই মানুষের করণীয়। তাতে যেমন কাজের কোনো জাতিভেদ নেই, যারা সেই কাজ করে তাদেরও কোনো জাতিভেদ নেই। সুতরাং পরিশ্রম করা মোটেই সম্মান হানিকর নয়। এতে ব্যক্তির আত্মোন্নয়ন যেমন হয়, তেমনি হয় দেশের কল্যাণ। শ্রমবিমুখ জাতির পতন অনিবার্য। জগতের মহামনীষীরা সকলেই পরিশ্রম করেছেন এবং শ্রমের মর্যাদা দিয়ে গেছেন।

উপসংহার: জীবনের সর্বক্ষেত্রে শ্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের পরিশ্রমকে কোনো সমাজ কোনো কালেই তার যোগ্য মর্যাদা দেয়নি। যারা সত্যিকার অর্থেই জীবনে সম্মান পেয়েছেন তারা একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, পরিশ্রমেই জীবনের প্রকৃত আনন্দ। পরিশ্রমই জীবনের অশেষ দুঃখকষ্ট থেকে মানুষকে মুক্তির সন্ধান দেয়। তাই সকল প্রকার শ্রমের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রয়োজন।