- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
বাংলাদেশের কৃষক অথবা, বাংলাদেশের কৃষি ও কৃষক অথবা, কৃষক
সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা
দেশ মাতারই মুক্তিকামী দেশের সে যে আশা।
ভূমিকা: যুগ যুগ ধরে বিচিত্র শস্যসম্ভারে পরিপূর্ণ বাংলাদেশ। শস্যশ্যামলা বিস্তীর্ণ মাঠ এদেশের মানুষের মনকে শুধু উদারই করে না, উদরপূর্তি করে বাঁচিয়েও রাখে। এদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের শতকরা ৮০ জন লোক কৃষিজীবী অর্থাৎ কৃষক। বাকি ২০ জনও পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এজন্য এদেশের অর্থনীতির ভিত্তি কৃষিকেন্দ্রিক। কৃষিব্যবস্থার উন্নতি-অবনতির সাথে দেশবাসীর ভাগ্য জড়িত। আর এ কৃষিব্যবস্থার কাণ্ডারি যারা সেই কৃষক সমাজ আজ অনাদৃত, উপেক্ষিত ও লাঞ্ছিত।
কৃষকের অতীত অবস্থা: অতীতে গ্রামবাংলার কৃষকদের জীবন সুখী ও শান্তিময় ছিল। গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুরভরা মাছ আর স্বাস্থ্যবান কৃষক এ ছিল বাংলার সাধারণ দৃশ্য। সারা বছর খেয়ে-পরেও ঘরে খাদ্যশস্য উদ্বৃত্ত থাকত। তখন তাদের জীবনযাত্রা ছিল সহজ ও সরল। তারা তাদের অন্নবস্ত্রের সংস্থান অনায়াসে করতে পারত বলে পূজা-পার্বণে এবং ঈদ উৎসবে তাদের আনন্দের সীমা থাকত না।
বর্তমান অবস্থা: বর্তমানে কৃষকদের জীবন দুঃখকষ্ট আর অভাব অনটনে পরিপূর্ণ। এদেশের কৃষক এখন জীর্ণশীর্ণ গরু দিয়ে ফসল ফলাচ্ছে। আর গভীর হতাশায় গ্লানিময় জীবন যাপন করছে। দারিদ্র্য আর রোগ-শোক তাদের নিত্যসাথি, দুবেলা অন্ন তাদের নেই। রোগে ওষুধ নেই, এমনকি মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও তাদের নেই। একবেলা খেয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, রৌদ্রে পুড়ে তারা আমাদের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে তোলে। কারও বিরুদ্ধে তাদের কোনো অভিযোগ নেই।
কৃষকদের দুরবস্থার কারণ: বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষকদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ। অত্যধিক জনসংখ্যা, জমির উর্বরাশক্তি হ্রাস, মান্ধাতার আমলের কৃষিব্যবস্থা ইত্যাদি কৃষকের দুরবস্থার কারণ। অস্বাভাবিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আবাদি জমির পরিমাণ যেমন কমছে তেমনি জমিগুলো ছোট ছোট খন্ডে ভাগ হয়ে চাষাবাদের অন্তরায় সৃষ্টি করছে। জমির উর্বরাশক্তি কমছে অথচ কৃষক জমিতে প্রয়োজনীয় সার জোগাতে পারছে না। আমাদের কৃষকরা নিরক্ষর বলে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ সম্পর্কে তারা সম্পূর্ণ অজ্ঞ। সর্বোপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষকদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলছে।
আমাদের দেশের কৃষকদের দুরবস্থার একটি অন্যতম কারণ অশিক্ষা। এদেশের কৃষকরা লেখাপড়া জানে না বলে আধুনিক কৃষিপদ্ধতির সঙ্গে তেমন কোনো যোগাযোগ নেই। ভালো ফসল ফলানোর জন্য কী উপায় অবলম্বন করতে হয় তা তারা জানে না। ভালো জাতের সার প্রয়োগের ফলে কী উপকার হয়, ভালো বীজ বপন করলে কী উপকারে আসে, আধুনিক চাষাবাদ প্রণালি কী ধরনের, এ সবকিছু দেশের অধিকাংশ কৃষকের অজানা। ফলে তারা উৎপাদন বাড়াতে পারছে না বলে তাদের সমস্যা কমছে না। তাছাড়া নানা কুসংস্কার এদেশের কৃষকদের জীবনে বিরাজ করছে। ভাঙা লাঙল ও হাড় বের করা গরু তাদের সম্বল। নিজেরা ভালো খেতে পায় না বলে নানা রোগে তারা ভুগে মরে। এসব সমস্যা আমাদের কৃষকদের জীবনে দুঃখ নিয়ে এসেছে।
উন্নতি বিধানের উপায়: দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হলে এবং কৃষকদের উন্নতি করতে হলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন। যেমন- ১. নিরক্ষর কৃষকদের ভেতর কৃষিশিক্ষার বিস্তার ঘটানো, ২. সমবায় সমিতি গড়ে তোলা, ৩. বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা এবং সেগুলোর ব্যবহার সম্বন্ধে কৃষকদের অবহিত করা, ৪. কৃষিকাজের জন্য সহজ শর্তে ঋণ দান করা, ৫. উন্নত বীজ, সার ও কীটনাশক ওষুধ সরবরাহ করা, ৬. কৃষিপণ্যের ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা বিধান করা, ৭. প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় কৃষকদের সর্বাত্মক সাহায্য করা, ৮. কৃষিপণ্য সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা, ৯. কৃষকদের স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করা ইত্যাদি।
বর্তমান সরকার কৃষকদের জন্য অনেক বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। প্রতিটি উপজেলায় কৃষি অফিস স্থাপন করা হয়েছে এবং কৃষকদের সাহায্যের জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে।
উপসংহার: কৃষি ও কৃষকদের উন্নতি বা অবনতির সাথে আমাদের অর্থনীতি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। তাই এদেশের উন্নতি করতে হলে কৃষকদের অবস্থার উন্নতি করতে হবে। আমাদের সরকারের দৃষ্টি কৃষকদের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার জন্য সরকার সব রকম সাহায্য-সহযোগিতা করে যাচ্ছে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে কৃষকদের অবস্থার উন্নতি হবে।