• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা অথবা, একটি বর্ষণমুখর দিন

ভূমিকা: দৈনন্দিন কর্মমুখর জীবনপ্রবাহের গতানুগতিকতার মধ্যে এমন কিছু দিন ও মুহূর্ত আসে যেগুলো একটা বিশেষ স্বাতন্ত্র্য ও রসাস্বাদে আমাদের মনের মণিকোঠায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে, যা সহজে ভোলা যায় না। এমনি এক বর্ষণমুখর স্বপ্নময় সন্ধ্যা আমার স্মৃতির জগতে অক্ষয় হয়ে আছে।

বর্ষণমুখর সকালের অনুভূতি: সকাল থেকেই আকাশ মেঘাচ্ছন্ন। মনে হচ্ছিল যেন সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। নিত্যদিনের মতো খোলা জানালার পাশে বই নিয়ে পড়তে বসেছিলাম। একটু পরেই বৃষ্টি নামল। চারদিক আরও ঘন অন্ধকার হয়ে এলো। এমন বাদলা দিনে কি পড়ায় মন বসে? কোনো এক স্বপ্নপুরীর কল্পনার মন ভেসে যেতে চায়, রঙিন স্বপ্নের মালা গেঁথে চলে। কতক্ষণ ধরে কী ভাবছিলাম খেয়াল নেই। হঠাৎ পাশের বাড়ির টেপ রেকর্ডার থেকে ভেসে এলো মন উদাস করা গানের সুর-

"মন মোর মেঘের সঙ্গী উড়ে চলে দিগদিগন্তের পানে নিঃসীম শূন্যে
শ্রাবণ-বর্ষণ সঙ্গীতে।"
গানটি শুনে মন হয়ে গেল আনমনা উদাস।

বর্ষণমুখর সন্ধ্যার বর্ণনা: সকাল থেকেই অবিরাম বৃষ্টি। সারাদিন পার হয়ে গেল, বৃষ্টির কমতি নেই। একইভাবে অশ্রান্ত বর্ষণ। মেঘের কালো ঝাঁপির মধ্যে হারিয়ে গিয়েছিল দিনের সূর্য। মেঘের কালো ছায়ায়, বৃষ্টিতে, ঝড়ো হাওয়ায়, ঘন ঘন মেঘের গুরু গুরু ডাকে অদ্ভুত একটা মায়াবী পরিবেশ। গাছের ডালে পাতায় ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির ফোঁটার চলছিল অবিরাম মাতামাতি। 'ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে' এমনি করে আটকে থাকার বাধ্যবাধকতা চার দেওয়ালের মাঝে বন্দি করে ফেলেছিল মানুষকে। স্বাভাবিক জীবন হয়ে পড়েছে বিপর্যস্ত। মানুষজন সকলেই ঘরের দিকে ত্রস্তপদে রওয়ানা হয়েছে। কেউ ছাতা মাথায়, কেউ পাতার মাথাল মাথায় দিয়ে, কেউবা খালি মাথায় ছুটে চলেছে। সকাল দুপুরে বেরিয়ে আসা গবাদি পশু গোশালায় ফিরেছে। পাখিরা ফিরেছে তাদের নীড়ে।

আমি নিতান্তই ছাত্র। একটানা বৃষ্টি আমার কাছে মোটেই সুখকর নয়। দিনভর বৃষ্টি মানেই দুপুরে নিরামিষ আহার, পড়শির বাড়ি যেতে হাঁটু কাদা জল, পদে পদে পিছল পথের হুমকি, আর সবচেয়ে নিদারুণভাবে বিকেলে খেলার মাঠে ফুটবল খেলার ইতি। অতএব, সবকিছুর আশা ছেড়ে দিয়ে আগে থেকেই জানালার পাশে বসেছিলাম।

বৃষ্টির জন্য দৃষ্টি বেশিদূর প্রসারিত করা গেল না। চোখের ঠিক সামনেই টপটপ করে পানির বড় বড় ফোঁটা পড়ছে চাল গড়িয়ে। প্রাকৃতিক বর্ষণের তুলনায় এ পতনের বেশ একটা ছন্দ আছে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর এক একটা ফোঁটার পতন।

দূরে গাছপালাগুলো ঝাপসা হয়ে আছে। সতেজ, সবুজ গাছগুলো কালচে, ধূসর দেখাচ্ছে, এমনকি পাশের বাড়িটিও দেখা যাচ্ছে না ভালো করে। দুএকজন লোক হাঁটছে। সূর্যের মুখ দেখা যায়নি সারাদিন। পুরো দিনটাতেই ছিল সন্ধ্যার আমেজ। পাশের ডোবা থেকে ব্যাঙের প্রমত্ত ডাক শোনা যাচ্ছে। সে যেন এক কনসার্ট। দূরে দেখলাম একটা জোনাকি জ্বলে উঠল। কিন্তু বৃষ্টির দিনে তো জোনাকি জ্বলে না। তবে কী? না, লণ্ঠন হাতে কে যেন গোয়ালে গরু বাঁধছে।

বর্ষণধারা আরও বাড়ল। সেই সঙ্গে বিদ্যুতের আলোকে যেন ত্রিনয়নের আগুন জ্বলে উঠছে। সঙ্গে সঙ্গে হাওয়ার তীব্র গতিতে গাছপালাদের উন্মত্ত ঝাঁকুনি, এমনকি বাড়িটাও যেন কেঁপে উঠল। প্রচন্ড জোরে বাজ পড়ার শব্দে আতঙ্কিত নৃত্য শুরু হলো। ঝড় থেমেছে কিন্তু তখনও বৃষ্টি পড়ছে অবিরাম। বিদ্যুতের চোখ ধাঁধানো আলোর ঝিলিক, গুরু গুরু মেঘের গর্জন, চারদিকে ঝিঁঝি পোকার ডাক। মন মুগ্ধকরা এ এক মোহময় পরিবেশ। কবির ভাষায়- 'এমন দিনে তারে বলা যায়/এমন ঘন ঘোর বরিষায়।'

উপসংহার: বর্ষণমুখর সন্ধ্যার একটা নিজস্ব রূপ আছে। তা একান্তে অনুভব না করলে তার মহিমা বোঝা যায় না। হৃদয়ের বেদনা স্মৃতিমুখর সন্ধ্যায় বুক ভরে জেগে থাকে। হৃদয় এক অনাবিল আনন্দে ভরে যায়।