- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার অথবা, নিরাপদ সড়ক
ভূমিকা: আজকের ব্যস্ত জীবনে সড়ক দুর্ঘটনা এক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। প্রতিদিন ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা- প্রতিমুহূর্তে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে পথচারী। দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মারা যাচ্ছে অসংখ্য লোক, যারা বেঁচে যাচ্ছে তারাও পঙ্গু হয়ে অভিশপ্ত জীবনের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা মানুষের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে জীবনে নিয়ে আসে নৈরাশ্যের কালো অন্ধকার। সৃষ্টি করে স্বজনহারাদের মর্মান্তিক আর্তনাদ।
বিরাজমান অবস্থা: পত্রপত্রিকার পাতা খুললেই সড়ক দুর্ঘটনার বিচিত্র ও ভয়াবহ বিবরণ চোখে পড়ে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো সড়কে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে। সেসব দুর্ঘটনার খবর পত্রিকায় প্রচারিত হয়, সেই সঙ্গে থাকে দুর্ঘটনার ছবি। খবর পড়ে আর ছবি দেখে মানুষের গা শিউরে ওঠে। অনেক সময় দুর্ঘটনার ভয়াবহ ছবি টেলিভিশনে প্রত্যক্ষ করতে হয়। বীভৎসতায় গা শিউরে ওঠে। দুর্ঘটনার খবর প্রচারিত হয় বেতারে। তাছাড়া জনাকীর্ণ শহরে-বন্দরে চলতে গেলে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করা বিচিত্র কিছু নয়। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারানোর ঘটনা আজকাল আর অস্বাভাবিক কিছু নয়।
দেশে সড়ক যোগাযোগের উন্নতি ঘটছে। লোক ও যানবাহন চলাচলের সংখ্যাও বেড়েছে। তাই বাসে-ট্রাকে, ট্রাকে-ট্রাকে, বাসে-বাসে সংঘর্ষ এখন সাধারণ ঘটনা। দুর্ঘটনা ঘটছে যেকোনো যানবাহনের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের। ঠেলাগাড়ি থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক মডেলের গাড়ি চলছে রাস্তায়। বিশালাকার ট্রাকের পাশাপাশি চলছে ছোট রিকশা। ফলে সংঘর্ষ ঘটছে প্রতিনিয়ত। শুধু যে সড়ক পথেই দুর্ঘটনা ঘটছে তা নয়, রেলপথ ও নৌপথের দুর্ঘটনাও কম নয়। তবে সড়ক দুর্ঘটনার ব্যাপকতা ও ভয়াবহতা মানবজীবনে নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সড়ক দুর্ঘটনার কারণ: সড়ক দুর্ঘটনার কারণ অনেক। বেপরোয়া গাড়ি চালনাই অধিকাংশ দুর্ঘটনার কারণ বলে বিবেচিত হয়। গাড়ির চালক ট্রাফিক আইন সম্পর্কে সচেতন থাকে না। কী করে অপরকে অতিক্রম করে নিজে এগিয়ে যাবে সে প্রবণতা প্রায় সকল চালকের মধ্যে দেখা যায়। অদক্ষ চালক গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসে। কম পয়সায় চালক নিযুক্ত হলে তার কাছ থেকে ভালো গাড়ি চালনা আশা করা যায় না। অনেকের নেই কোনো প্রশিক্ষণ, নেই উপযুক্ত লাইসেন্স। দুনম্বর কথাটি এখানে বেশ প্রচলিত। যান্ত্রিক গোলযোগ নিয়েও গাড়ি রাস্তায় নামে। ফলে দুর্ঘটনাই স্বাভাবিক ব্যাপার বলে বিবেচনা করলে অযৌক্তিক হবে না।
আমাদের দেশে বিশালাকার বাস বা ট্রাকের পাশে সাইকেল বা রিকশা বা বেবিট্যাক্সি চলে। সমান গতি না হওয়ায় অনেক ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটে। দ্রুতগতি যানের পাশে ধীর গতির যান চললে দুর্ঘটনা ঘটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। রাস্তায় চলার জন্য পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় সিগন্যাল থাকে না, থাকে না প্রয়োজন অনুযায়ী ট্রাফিক পুলিশ। ফলে প্রতিনিয়তই ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন হয়। তাছাড়া যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কগুলো পরিকল্পিত নয়। অনেক সংকীর্ণ সড়কে বড় বড় গাড়ি চলার সুযোগ পায়।
পথচারীদের জন্য নিরাপদ ফুটপাত নেই। যা আছে তাও হকারদের দখলে চলে গেছে। পথচারীদের স্বতন্ত্র চলার পথ যেমন নেই, তেমনি পথচারীরাও নিয়মের তোয়াক্কা করে না। সড়কের পাশে জমে থাকে নির্মাণ সামগ্রী। নষ্ট যান-ট্রাক সড়কের পাশেই পড়ে থাকে। কর্মচঞ্চল দিনে পার্কিংয়ের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা অনেক স্থানে নেই। অত্যধিক যানবাহন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, মাত্রাতিরিক্ত যাত্রীবহন, যেখানে সেখানে দাঁড়ানো এসব কারণে দুর্ঘটনা বেড়ে যাচ্ছে।
প্রতিকারের উপায়: দেশে জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে চলাচলের জন্য সেভাবে সড়ক ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে না। আনুষ বাড়ছে, বাড়ছে যানবাহনের সংখ্যা। কিন্তু বাহন হিসেবে গাড়ির সংখ্যা সেভাবে না বাড়ায় যাত্রীর চাপ পড়ছে বেশি। আবার গাড়ি যেভাবে বাড়ছে সেভাবে সড়ক যোগাযোগের সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে না। সেজন্য সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের জন্য সড়কের সংস্কার করতে হবে। নতুন প্রশস্ত সড়ক তৈরির সঙ্গে সঙ্গে পুরনো সড়কের সংস্কার সাধন করতে হবে।
ফুটপাত থেকে অবৈধ দখলকারীদের সরিয়ে দিয়ে পথচারীর চলাচল নিরাপদ করতে হবে। সব সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে হবে। আবার সবসময় সব ধরনের যানবাহনের চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে। গাড়িচালক ও পথচারী সকলের জন্য ট্রাফিক আইন কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করতে হবে। উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না থাকলে কোনো চালককেই লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকলে গাড়ি চলতে পারবে না।
ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলাচল অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। বেপরোয়া গাড়ি চালনা বন্ধ করতে হবে, বন্ধ করতে হবে অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে রাখা। পার্কিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থানে গাড়ি রাখতে হবে। তাহলেই সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পেতে পারে।
উপসংহার: অশিক্ষার অভিশাপে জর্জরিত এদেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার কমাতে হলে সকল পর্যায়ের মানুষকে সচেতন করতে তুলতে হবে। ট্রাফিক আইন কড়াকড়িভাবে আরোপ করার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। আর এ সকল পদক্ষেপ বাস্তবায়ন হলেই কর্মচঞ্চল মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন হবে এবং জাতির উন্নতি ঘটবে।