- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
মানবকল্যাণে বিজ্ঞান অথবা, বিজ্ঞানের জয়যাত্রা
ভূমিকা: ইংরেজি ভাষায় একটা প্রবাদ আছে- "Necessity is the mother of invention"- অর্থাৎ, প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জননী। জীবনসংগ্রামের তাগিদেই মানুষ অজানাকে জানতে চেয়েছে। অজানাকে জানার ইচ্ছা জন্ম দিয়েছে বিজ্ঞানের, আর বিজ্ঞান দিয়েছে মানুষকে গতি, সেই সঙ্গে স্বনির্ভরতার আশ্বাস। শুরু হলো বিজ্ঞানের জয়যাত্রা। ক্রমে অজ্ঞানতার অন্ধকার বিদূরিত হলো বিজ্ঞানের সাধনায়।
বিজ্ঞানচেতনার প্রসার: সেই আদিম যুগে গোষ্ঠীবদ্ধ যাযাবর মানুষের জীবনে যুগান্তর আনল আগুনের আবিষ্কার আর কৃষিকার্য প্রচলন। ঐ সময় বয়ন শিল্পেরও উদ্ভব ঘটে। ভারি জিনিস সহজে তোলার জন্য ঐ সময় মানুষ কপিকল, আলম্ব প্রভৃতি যন্ত্রের সাহায্য নিতে শিখেছিল। 'প্যাপিরাস' জাতীয় নলখাগড়া থেকে মিসরের মানুষ প্রথম লেখার উপযোগী কাগজ তৈরি করল। ইরাক অঞ্চলের লোকেরা প্রথম চাকাযুক্ত গাড়ি বানিয়ে পরিবহন ব্যবস্থায় যুগান্তর আনল। পানি তোলার উপযোগী বিশেষ ধরনের পাম্প এবং যন্ত্রচালিত ঘড়ি প্রথম আবিষ্কৃত হয় চীনদেশে। গ্রিসের মানুষেরা প্রথম পৃথিবী ও মহাকাশের মানচিত্র বানায়। প্রাণিবিদ্যা, চিকিৎসাশাস্ত্র, স্থাপত্যবিদ্যা এবং জ্যামিতির ক্ষেত্রে গ্রিকবিজ্ঞানীদের দান কম ছিল না। অন্যদিকে বীজগণিত, জ্যোতির্বিজ্ঞান, শল্যচিকিৎসা, রসায়নশাস্ত্র, জীববিদ্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে প্রাচীন ভারতের ও আরবদেশের বিজ্ঞানীরা যেসব তত্ত্ব উদ্ভাবন করেছিলেন, তা মানুষের জীবনযাত্রাকে যথেষ্ট সহজ করে দেয়।
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা: বিজ্ঞানের বলে মানুষ আজ খনির অন্ধকারে আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়েছে। বিজ্ঞানের শক্তিবলে মানুষ দানবীয় নদীস্রোতকে বশীভূত করে ঊষর মরুপ্রান্তরকে করেছে জলসিক্ত, ভূগর্ভের সঞ্চিত শস্য-সম্ভাবনাকে করে তুলেছে সফল, দূর করে দিয়েছে পৃথিবীর অনুর্বরতার অভিশাপ। বিজ্ঞান আজ উর্বরতা দিয়ে ক্ষয়িষ্ণু বসুধাকে শস্যবতী করে তুলেছে। নব নব শিল্প প্রকরণে সে উৎপাদন জগতে এনেছে, যুগান্তর এবং সুদূরকে করেছে নিকটতম। বিজ্ঞানের সাফল্যে বসুধা আজ কলহাস্যমুখরা।
মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের অবদান দৈনন্দিন জীবনে মানুষ বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারকে পূর্ণাঙ্গরূপে কাজে লাগিয়েছে উনিশ শতকে। ঐ সময়ই মানুষ বাষ্পের শক্তিকে নানা কাজে ব্যবহার করতে শেখে। তারপর আমরা ক্রমে ক্রমে বিদ্যুৎশক্তিকে কাজে লাগাতে শিখলাম। বিশ শতকে জ্বালানি কয়লা ছাড়াও পেট্রোলিয়াম, প্রাকৃতিক গ্যাস, এমনকি পারমাণবিক শক্তিকে মানুষের কল্যাণের কাজে লাগাতে পেরেছি।
বাষ্পশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের রান্নাঘরে প্রেসারকুকার গৃহিণীর কাজকে সহজ করে দেয়। তার সঙ্গে থাকে বৈদ্যুতিক বা গ্যাসের চুলা, এমনকি সৌরচুল্লি। বায়োগ্যাসে কোনো অঞ্চলে গ্রামের ঘরে ঘরে আলো জ্বলে, তাতে রান্নার কাজ সহজ হয়। পরিবহন ব্যবস্থায় বিজ্ঞান তো রীতিমতো যুগান্তর এনেছে। রোগনির্ণয়েও তার ভূমিকা কম নয়। আমোদ-প্রমোদের ক্ষেত্রে টেলিভিশন ও ভিডিও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলেও পৌছে গেছে। সৌরশক্তি চালিত পকেট ক্যালকুলেটর করে দিচ্ছে দুরূহ হিসাব-নিকাশ। গৃহস্থালির কাজে রান্নার জন্য রয়েছে কুকিং রেঞ্জ, মসলাবাটা ও নানান খাদ্য গুঁড়া করার মেশিন, রয়েছে বাসন ও কাপড় ধোয়ার যন্ত্র। এছাড়া ঘর সাফাই মেশিন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র, টাইপ থেকে শুরু করে ছোটদের জন্য রয়েছে ইলেকট্রনিক খেলনা।
রেডিও বা টেলিভিশনের প্রভাতী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভাঙে আমাদের। বিজ্ঞানের কৌশলে ততক্ষণে কলে পানি এসে যায়। প্রয়োজনমতো কখনো সেই পানি উষ্ণ, কখনো বা শীতল। গরমের সময় বৈদ্যুতিক পাখা না হলে আমাদের চলে না। ধনী লোকেরা এয়ারকুলার ব্যবহার করতে পারে। টেলিফোনের সাহায্যে হাজার হাজার মাইল দূরের আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের খোঁজখবর নেওয়া যায়। প্রতিদিন বাজারে যাওয়ারও প্রয়োজন হয় না। বিজ্ঞানের উদ্ভাবিত ফ্রিজের মধ্যে কয়েকদিনের বাজার এনে রেখে দেওয়া যায়। বাস, ট্রেন ও ট্যাক্সির সাহায্যে দ্রুতগতিতে স্থানান্তরিত হওয়া যায়। এসবই হচ্ছে বিজ্ঞানের কল্যাণে।
মানবকল্যাণে চিকিৎসাবিজ্ঞান: আধুনিক বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ মৃত্যুর কবল থেকে ফিরে আসতে সমর্থ হচ্ছে। রঞ্জন-রশ্মি এবং আল্ট্রাসনোগ্রাফির সহায়তায় শরীরের অদৃশ্য বস্তু দৃশ্যমান হয়েছে। রেডিয়াম ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর ক্ষতের মারাত্মক বিষক্রিয়াকে অনেকাংশে প্রতিহত করেছে। পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন ও স্টেপটোমাইসিন ইত্যাদি মহৌষধ আবিষ্কারের ফলে কোটি কোটি মানুষ নানান দুরারোগ্য ব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। দুরারোগ্য সংক্রামক ব্যাধি বসন্তের জীবাণু নিবারণের জন্য ভ্যাক্সিন আবিষ্কার করেন এডওয়ার্ড জেনার। এমনিভাবে বিজ্ঞানের কল্যাণে আমাদের বহু অভাব দূরীভূত হয়েছে।
উপসংহার: আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের সঙ্গে এক হয়ে গেছে বিজ্ঞান। মানবকল্যাণে বিজ্ঞানের দানই শ্রেষ্ঠ। এজন্য বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীর কাছে মানুষ চিরঋণী। বিজ্ঞানকে বাদ দিলে আজ আমাদের বেঁচে থাকা দুরূহ। বিজ্ঞানকে যদি ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যবহার না করে মানবকল্যাণে ব্যবহার করা যায়, তবে মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নতুন অধ্যায় সূচিত হবে।