- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
নিয়মানুবর্তিতা অথবা শৃঙ্খলা
ভূমিকা: সমস্ত বিশ্বপ্রকৃতি এক অদৃশ্য নিয়ম-শৃঙ্খলার অধীন। সৌরজগতের গ্রহ উপগ্রহ থেকে পৃথিবীর গাছপালা, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কীটপতঙ্গ পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট ও কঠোর নিয়ম-শৃঙ্খলায় নিয়ন্ত্রিত। কোথাও এর সামান্যতম ব্যতিক্রম বা বিপর্যয় নেই। মানবজীবনেও প্রয়োজন সেই কঠোর নিয়মের শাসন। মানুষের জীবনকে সুন্দর করে তুলতে হলে তার জীবনেও শৃঙ্খলাবোধ বা নিয়মানুবর্তিতার দরকার। কারণ শৃঙ্খলাই সৌন্দর্য ও জাতীয় উন্নতির উপায়।
জীবনে শৃঙ্খলাবোধের প্রয়োজনীয়তা: প্রকৃতির রাজ্যে যে শৃঙ্খলা বিরাজিত তারই শাসনে মানুষের দেহ-মনে আসে অনিবার্য ক্রমবিবর্তন। কোনো মানুষই সেই নিয়মকে অস্বীকার করতে পারে না। শৈশবের শুভলগ্নেই নিয়মানুশীলনের শিক্ষা গ্রহণ করতে হয়। মানবজমিনে সোনা ফলাতে হলে চাই নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাবোধের বিশ্বস্ত অনুশীলন। কঠিন নিয়মের বাঁধনে বাঁধতে না পারলে পরিবারে ভাঙন ধরে, সমাজ টেকে না, রাষ্ট্র বিপর্যস্ত হয়, প্রতিষ্ঠান অচল হয়ে পড়ে।
শৃঙ্খলার শ্রেণিবিভাগ: জীবনে শৃঙ্খলাবোধকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। দেহ গঠনে শৃঙ্খলাবোধ এবং মনোগঠনে শৃঙ্খলাবোধ। তাই আমাদের দেহকে সুস্থ রাখার জন্য কাজকর্ম, আহার ও নিদ্রার মধ্যে শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতা একান্ত প্রয়োজন।
সামাজিক জীবনে শৃঙ্খলা শৈশব থেকে মানুষকে সমাজে বিচরণ করতে হয়, গ্রহণ করতে হয় নানা সামাজিক দায়িত্ব। কিন্তু সমাজের প্রত্যেক মানুষ যদি খেয়াল-খুশিমতো যথেচ্ছাচার শুরু করে, তাহলে অবিশ্রান্ত সংঘর্ষে মানবজীবনের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে।
পারিবারিক জীবনে শৃঙ্খলা পরিবার সমাজের এক একটি ক্ষুদ্র পঙ্ক্তি। পারিবারিক শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে সামাজিক শৃঙ্খলা আসে। তাই পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রত্যেক মানুষের উচিত পারিবারিক নীতিকে গুরুত্ব দেওয়া, যা মানুষের জীবনে সামগ্রিকভাবে শৃঙ্খলা এনে দেয়।
ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা: ছাত্রজীবনই নীতিচেতনা-নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাবোধ অনুশীলনের প্রকৃষ্ট সময়। তাই অধ্যয়নকক্ষে পাঠ ও গঠনক্ষেত্রে প্রাত্যহিক জীবনচর্চায় ছাত্রদেরও নিয়ম-শৃঙ্খলা কঠোরভাবে অনুশীলন করতে হবে। সব ছাত্র হয়ত মেধাবী নয়, অর্থ সামর্থ্যও সকলের বেশি থাকে না, কিন্তু ছাত্র যদি নিয়মনিষ্ঠ জীবনযাপন করে, শিক্ষাক্ষেত্রে যদি উপযুক্ত শৃঙ্খলা মেনে চলে, জীবনযাপনেও যদি তার প্রয়োগ ঘটায়; তবে ছাত্র ভবিষ্যতের শ্রেষ্ঠ নাগরিক, শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেমিকরূপে গড়ে উঠতে পারে।
শৃঙ্খলা ও মানবসমাজের উন্নতি: মানবসভ্যতার বর্তমান চরম বিকাশের মূলেও আছে মানুষের সুশৃঙ্খল ও সুসংহত কর্মোদ্যোগ। যেখানে শৃঙ্খলা নেই, সেখানে শ্রী নেই, কল্যাণ নেই, আনন্দ নেই, শান্তি নেই। সুশৃঙ্খল জাতির ভাগ্যে জোটে সাফল্যের জয়টীকা এবং উচ্ছৃঙ্খল জাতির ভাগ্যে জোটে পরাজয়ের দুঃসহ গ্লানি। আমাদের অর্থনৈতিক জীবনকেও সুষ্ঠুভাবে চালনার জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক শৃঙ্খলাবোধ। বেহিসাবি মানুষ জীবনে নানা দুঃখ-দুর্দশার সম্মুখীন হয়।
শৃঙ্খলার গুরুত্ব: ব্যক্তিগত, দৈহিক, নৈতিক, মানসিক, আধ্যাত্মিক সর্বক্ষেত্রে উন্নতির জন্য শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন আবশ্যক। স্বাস্থ্যরক্ষায় নিয়ম ভঙ্গ করলে দেহ রোগাক্রান্ত হতে বাধ্য। আত্মসংযমে অসমর্থ হলে মানুষ ইন্দ্রিয়ের দাস হয়ে পড়বেই। কাজেই জীবনের সর্বক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বা নিয়মানুবর্তিতার চর্চা করতে হবে। প্রয়োজনীয় বিধিবিধান না মানলে সুন্দর জীবন গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
উপসংহার: মানুষ হিসেবে আমাদের প্রত্যেকের জীবনে যথাযথ শৃঙ্খলাবোধ থাকা প্রয়োজন। শৃঙ্খলাহীন জীবন হালছাড়া নৌকার মতো। যাকে বলে নীতিহীন জীবন। শৃঙ্খলাবোধের মাধ্যমে আমরা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনেই শুধু নয়, জাতীয় জীবনে তথা সমগ্র মানব জাতির ক্ষেত্রে লাভবান হতে পারব।