• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান

ভূমিকা: সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে মানুষের জীবনযাত্রায় যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমনি পরিবর্তন এসেছে চিকিৎসা পদ্ধতিতেও। এক সময় রোগ-ব্যাধিকে মানুষ কোনো অশুভ শক্তি বা স্রষ্টার অভিশাপ মনে করত। আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির বিকাশে বিজ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বিজ্ঞানের কল্যাণে মানুষ বিভিন্ন রোগের কারণ অনুসন্ধান করে তার নিরাময়মূলক ওষুধ আবিষ্কার করেছে। তাই চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম।

প্রাচীনকালের চিকিৎসা ব্যবস্থা: প্রাচীনকালে মানুষ প্রকৃতির কাছে ছিল অসহায়। সে সময়ের চিকিৎসাও ছিল প্রকৃতিনির্ভর। এসব চিকিৎসার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। বিজ্ঞানসম্মত চিকিৎসার অভাবে মানুষ তখন জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা তো যেতই, এমনকি সাধারণ রোগেও তাদের মৃত্যু হতো।

আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা: বিজ্ঞানের কল্যাণে চিকিৎসাক্ষেত্রে আবিষ্কৃত হয়েছে রোগ নির্ণয়ের নানা ধরনের যন্ত্রপাতি এবং রোগ নিরাময়ের বিভিন্ন ওষুধ। উন্নত যন্ত্রপাতির সাহায্যে যেকোনো জটিল রোগও এখন খুব সহজে নির্ণয় করা যাচ্ছে। এছাড়া অনেক দুরারোগ্য রোগের ওষুধ আবিষ্কারের ফলে মানুষ জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েও দেখছে নতুন জীবনের স্বপ্ন। ধীরে ধীরে এর সুফলও তারা পেতে থাকে। আধুনিক চিকিৎসাই মানুষকে মুক্তি দিয়েছে প্লেগ, কলেরা, ম্যালেরিয়া, গুটিবসন্তের মতো রোগের হাত থেকে। বিজ্ঞানের কল্যাণেই আবিষ্কৃত হয়েছে বিভিন্ন জটিল রোগের প্রতিষেধক।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের অর্জন: আঠারো উনিশ শতকের দিকে চিকিৎসা পদ্ধতি ততটা উন্নত ছিল না। তবে বিংশ শতাব্দী থেকে চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক বেশি উন্নত হতে শুরু করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রভূত অগ্রগতির ফলেই মানুষের গড় আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন রোগের ওষুধ আবিষ্কারের পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা রোগের কারণও, অনুসন্ধান করেছেন। ফলে পূর্ব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে মানুষ এখন 'সহজেই রোগের আক্রমণ থেকে রক্ষা পাচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞান শিশু মৃত্যুর হারও অনেক কমিয়ে এনেছে। কোনো রোগই এখন আর মহামারী আকারে দেখা দেয় না। প্রজনন ক্ষেত্রেও চিকিৎসা বিজ্ঞান এগিয়ে গিয়েছে অনেক দূর। আবিষ্কৃত হয়েছে টেস্টটিউব বেবির মতো সন্তান জন্মদানের পদ্ধতি। এর ফলে নারী মুক্তি পেয়েছে বন্ধ্যাত্বের অভিশাপ থেকে।

চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের অবদান চিকিৎসা জগতে বিজ্ঞান আজ যুগান্তর এনেছে। দুরারোগ্য সব রোগব্যাধিতে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। আবিষ্কৃত হয়েছে যুগান্তকারী স্ট্রেপটোমাইসিন, পেনিসিলিন, স্কেলোমাইসিন, প্যারাসিটামল প্রভৃতি ওষুধ, এক্সরে, ই.সি.জি, এন.জি.ও.গ্রাম প্রভৃতি। সব আবিষ্কার মৃত্যুপথযাত্রীকে দিয়েছে নতুন জীবনের আশ্বাস। বিশ শতকে বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে কালাজ্বরের জীবাণু, কৃত্রিম হৃৎপিন্ড, পেনিসিলিন ওষুধ, কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন, ডিএনএ, হার্টলাং মেশিন প্রভৃতি। কর্নিয়া সংযোজন, বৃদ্ধ, অস্থিমজ্জা, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস ও যকৃতের মতো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপনে চিকিৎসাশাস্ত্র আজ বিজ্ঞানের অবদানে সমৃদ্ধ।

চিকিৎসাবিজ্ঞান এখন অতীতের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত। সিটিস্ক্যানের মাধ্যমে টিস্যুর ঘনত্ব নির্ণয় করে এখন রোগ নির্ণয় করা যাচ্ছে। অপটিকস্ ফাইবার বা আলোক তত্ত্ব ব্যবহার করে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, যেমন- শিরা-ধমনি, ফুসফুস, পাকস্থলী প্রভৃতির অবস্থা নির্ভুলভাবে জানা যায়। অতিকম্পনশীল শব্দ এবং লেসার রশ্মিকে কাজে লাগিয়ে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিপ্লব সাধন করেছে। এদের সাহায্যে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের কী অবস্থা তা জানা যাচ্ছে এবং রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসাও দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। মূত্রথলি ও পিত্তথলির পাথর চূর্ণ করার কাজে যেমন সফলতা এসেছে তেমনিভাবে সফলতা পেয়েছে বহুমূত্র রোগীর অন্ধত্ব প্রতিরোধ। বর্তমানে চিকিৎসা ক্ষেত্রে যুক্ত হয়েছে কম্পিউটার প্রযুক্তি। তাতে চিকিৎসাশাস্ত্রে অভূতপূর্ব উন্নতি সাধন করা সম্ভব হচ্ছে।

রোগ নিরাময়ে বিজ্ঞান: রোগ নিরাময় করতে বিজ্ঞান যেসব আবিষ্কার মানুষকে উপহার দিয়েছে তা অতুলনীয়। যুগান্তকারী সব ওষুধ আবিষ্কারের ফলে জটিল রোগের চিকিৎসা সহজতর হয়েছে। এর পাশাপাশি জ্বর, সর্দি, কাশি প্রভৃতি সাধারণ রোগব্যাধির হাত থেকেও মানুষ রক্ষা পেয়েছে। পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন, স্ট্রেপটোমাইসিন প্রভৃতি আবিষ্কারের ফলে মানুষ রোগের সীমাহীন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়েছে। ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েও মানুষ আজ বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখছে। তেজস্ক্রিয় মৌলিক পদার্থ রেডিয়াম ব্যবহার করে চিকিৎসকরা অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা করছেন। বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন কৃত্রিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন করাও সম্ভব হচ্ছে।

রোগ প্রতিরোধে বিজ্ঞান: Preventation is better than cure. অর্থাৎ 'রোগ নিরাময়ের চেয়ে রোগ প্রতিরোধ করা শ্রেয়'। পুরাতন এই প্রবাদটি সর্বাংশে সত্য। রোগে আক্রান্ত হওয়ার পূর্বে তাকে প্রতিরোধ করা গেলে রোগের যন্ত্রণা ও ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। রোধ করা যায় মৃত্যু। এমন চিন্তা-ভাবনা থেকেই রোগ প্রতিরোধে বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা। বিজ্ঞানের এ যাত্রা এখনও অব্যাহত। এপথ ধরেই বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যক্ষ্মা, হুপিং কাশি, পোলিও, জলাতঙ্ক, হাম, বসন্ত প্রভৃতি রোগের প্রতিষেধক। হেপাটাইটিস বি ভাইরাস ও নারীদের জরায়ু ক্যান্সারের প্রতিষেধকও আবিষ্কৃত হয়েছে। রোগ প্রতিরোধে বিজ্ঞানের এই সাফল্য পৃথিবীকে করেছে বিস্মিত।

চিকিৎসাক্ষেত্রে কম্পিউটার কম্পিউটার হলো বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার। এই কম্পিউটার চিকিৎসাক্ষেত্রে এনেছে যুগান্তর। রোগ নির্ণয়ে, কম্পিউটারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি, আলট্রাসনোগ্রাফি, ভিডিও এনডোর্সকপি, প্যাথলজি, ইসিজি, ডিজিটাল এক্স-রে, ইকো কার্ডিওগ্রাফি, আলট্রা সাউন্ড ইমেজিং, স্পাইরাল সিটি স্ক্যান প্রভৃতি ক্ষেত্রেই কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এসব পদ্ধতি প্রয়োগ করে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয় করা সম্ভব হচ্ছে কম্পিউটারের কল্যাণেই। বর্তমান যুগে রোগ নিরাময়ের জন্য আবিষ্কৃত হচ্ছে নানা ধরনের ওষুধ। এসব ওষুধ তৈরির সময় তার মান নিয়ন্ত্রণে কম্পিউটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কম্পিউটারাইজড চিকিৎসা পদ্ধতির প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে মানুষের চেহারাও পাল্টে দিচ্ছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে কম্পিউটারের অবিস্মরণীয় সাফল্যের কারণে চিকিৎসাক্ষেত্রে এর ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান: বাংলাদেশের চিকিৎসাক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের ছোঁয়া লেগেছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো এদেশের চিকিৎসাব্যবস্থাও বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। সরকারি, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে মানুষের রোগ নির্ণয় করে তার উপযুক্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রোগ নির্ণয়ের আধুনিক পদ্ধতিগুলো এ দেশে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া এদেশের বিভিন্ন ওষুধ কারখানায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে জীবন রক্ষাকারী নানা ওষুধ। এদিক থেকে দেখতে গেলে বাংলাদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞান বেশ উন্নতি সাধন করেছে। কিন্তু তারপরও বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের অনেক মানুষ আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্পর্কে জানে না।

উপসংহার: বিজ্ঞান মানুষকে পৌছে দিয়েছে সফলতার স্বর্ণশিখরে। রোগ, ব্যাধি দূর করে মানুষকে সুস্থ-সবল রাখতে বিজ্ঞানের সাধনার অন্ত নেই। তাই প্রতিনিয়ত সে আবিষ্কার করে চলেছে নতুন নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি। মৃত্যুর দুয়ার থেকে মানুষকে সে ফিরিয়ে নিয়ে আসছে, তাকে নতুনভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।