• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

বর্ষাকাল অথবা, বর্ষায় বাংলাদেশ

ভূমিকা: বাংলাদেশে বছরের সূচনা হয় গ্রীষ্মের আবির্ভাবে বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে। এরপরই তৃষ্ণার শান্তিরূপা বর্ষা তার সুন্দর কান্তি নিয়ে আবির্ভূত হয়। মেঘের গর্জনে ধ্বনিত হয় মৃদঙ্গের বাদ্য, বিদ্যুৎশিখা আকাশের বক্ষদেশ বিদীর্ণ করে ঝলসে ওঠে, অজস্র ধারাবর্ষণ ঝরে পড়ে পৃথিবীর বুকে। বর্ষার রূপ বাংলাদেশে যেমন প্রকট ও সুস্পষ্ট, অন্য কোনো ঋতুর রূপবৈচিত্র্য তেমন করে আমাদের চোখে ধরা পড়ে না।

বর্ষার কালসীমা: ঋতুচক্রে গ্রীষ্মের পরেই আসে বর্ষা। আষাঢ় শ্রাবণ দুমাস বর্ষাকালের স্থায়িত্বকাল ধরা হলেও মূলত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাস থেকেই বাংলাদেশের বর্ষা শুরু হয়ে যায়।
বর্ষাকালের বৈশিষ্ট্য: তৃষিত পৃথিবী বর্ষার পানি পেয়ে দারুণ তৃষ্ণা থেকে মুক্তি লাভ করে শান্ত ও শীতল হয়। মানুষ ও পশুপাখি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। ঝিমিয়ে পড়া গাছপালা ও লতাপাতা নতুন প্রাণ পেয়ে সতেজ ও সবুজ হয়ে ওঠে। বর্ষার আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে থাকে। সূর্যকে আড়াল করে রাখে। অনেক সময় বেশ কয়েকদিন পর্যন্ত সূর্য দৃষ্টিগোচর হয় না। অবিরাম বৃষ্টি ঝরতে থাকে। খালবিল, নদীনালা ও পুকুরডোবা পানিতে ভরে যায়। চারদিক থেকে ব্যাঙের ডাক কানে এসে লাগে। রাস্তাঘাট ডুবে যায় পানিতে।

বর্ষার দিনে নৌকা ছাড়া কোথাও যাওয়া আসা করা যায় না। ছেলেরা নতুন পানিতে ছোটাছুটি করে আনন্দ পায়। কেউ কেউ মাছও ধরে। পানির মধ্যে বাড়িঘরগুলোকে দ্বীপের মতো মনে হয়। নানা রঙের পাল তুলে শত শত নৌকা ছুটোছুটি করে। ছোট ছোট নৌকায় জেলেরা মাছ ধরে। কলা গাছের ভেলায় চড়ে ছেলেমেয়েরা শাপলা ফুল কুড়িয়ে বেড়ায়। এসব দৃশ্য সত্যি খুব চমৎকার।

বর্ষা ও বাংলাদেশের অর্থনীতি: মাছে ভাতে অভ্যস্ত বাঙালির জীবনে বর্ষাঋতুর আবির্ভাব আশীর্বাদস্বরূপ। বাংলার শস্যক্ষেত্রের সেচের জলের প্রধান উৎসই বর্ষার ধারাজল। নদীনালা ভরে ওঠে, গাছের পাতার শ্যামলিমা গাঢ়তর রং নেয়, মানুষের মুখে হাসি ফোটে। শুধু ধানই নয়, পাটের আবাদও হয়। এ বর্ষায়। আর ধান ও পাটেই তো বাংলাদেশের অর্থনীতির বুনিয়াদটি গড়ে উঠেছে।

বর্ষার অন্যান্য অবদান বর্ষাকালে বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট কৃষকদের ঘরে আসে। আউশ ধানও বর্ষাকালেই চাষিরা ঘরে তোলে। এ সময়ে বাংলাদেশে আনারস, পেয়ারা, কলা, চালকুমড়া, ঝিঙে, করলা প্রভৃতি ফলমূল ও তরিতরকারি উৎপন্ন হয়। এ সময়ে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। বর্ষার সময় স্রোতের টানে অনেক পলিমাটি এসে জমিতে পড়ে এবং জমি উর্বর হয়। কেয়া, কামিনী, কদম, জুঁই, টগর, বেলি, চাঁপা প্রভৃতি ফুল বর্ষাকালে ফোটে। শাপলা ফুলের সমারোহে বিলের সৌন্দর্য বেড়ে যায়। বর্ষার সময় নৌকাযোগে বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।

বর্ষার অপকারিতা: বর্ষায় বাংলাদেশ বন্যার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়। পানিতে মাঠঘাট, খেত, বাড়িঘর সব ডুবে যায়। প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম বৃদ্ধি পায়। জনজীবনে নেমে আসে চরম দুর্ভোগ। রাস্তাঘাট তলিয়ে যায় পানির নিচে। নৌকা ছাড়া একেবারেই চলাচল করা যায় না। নদীর ভাঙনে বাড়িঘর ধসে যায়। বর্ষার ভয়ঙ্কর এ রূপের সাথে বাংলাদেশের লোকেরা বিশেষভাবে পরিচিত।

উপসংহার: বাংলাদেশের মানুষের জীবনে বর্ষাঋতুর ভূমিকা অনন্য ও স্বতন্ত্র। বর্ষায় বাংলাদেশ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের স্পর্শ লাভ করে ধন্য হয়। বাংলাদেশের এ শ্যামল সুন্দর দৃশ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বর্ষারই অবদান। বর্ষা তাই বাঙালির জীবনে এক বিশিষ্ট অধ্যায়রূপে বিদ্যমান।