- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
আমার প্রিয় কবি অথবা, আমাদের জাতীয় কবি
ভূমিকা: বাংলা সাহিত্যে কাজী নজরুল ইসলামের আবির্ভাব উন্নত শির হিমাদ্রির মতো, ধূমকেতু বা ঝঞ্ঝার মতোই আকস্মিক ও শক্তিধর। বাংলা কাব্যের শান্ত সরোবরে সমুদ্রের তরঙ্গ সঞ্চারিত করেছেন তিনি। তাই বাঙালি পাঠকের কাছে তাঁর প্রধান পরিচয় বিদ্রোহী কবি নজরুল।
জন্ম ও পরিচয়: কাজী নজরুল ইসলাম ভারতের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে বাংলা ১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ (১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দে) এক দরিদ্র মুসলিম' পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম ফকির আহমদ ও মাতার নাম জাহেদা খাতুন। বাল্যকালেই নজরুল পিতৃহীন হন। ফলে তাঁকে আর্থিক কষ্টে পড়তে হয়। নজরুলের জীবনে তাঁর কাকা বজলে করিমের প্রভাব অপরিসীম।
বাল্যজীবন: নজরুলের জীবন বিচিত্র কর্মবহুল, সদাচঞ্চল, অভিনব এবং প্রতিভাদীপ্ত। ১০ বছর বয়সে তিনি গ্রামের মক্তব থেকে নিম্ন প্রাথমিক পরীক্ষায় পাস করেন। তারপর তিনি রাণীগঞ্জের নিকটবর্তী শিয়ারশোল রাজ স্কুলে ভর্তি হন। তিনি সেখান থেকে আসানসোলে পালিয়ে যান এবং একটি রুটির দোকানে মাসিক পাঁচ টাকা বেতনে কাজ করতে থাকেন। এ সময়ে ময়মনসিংহ জেলার কাজী রফিজউদ্দিন আসানসোলের দারোগা ছিলেন। তিনি নজরুলের চোখেমুখে বুদ্ধির দীপ্তি দেখে তাঁকে স্বগ্রামে নিয়ে যান এবং কাজীর সিমলা গ্রামের হাইস্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। সেখান থেকে তিনি আবার ফিরে আসেন বর্ধমানে। বর্ধমানের শিয়ারশোল রাজ বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষায় বিশেষ কৃতিত্বের জন্য তিনি একেবারে সপ্তম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণিতে ওঠেন। পরের বছর ম্যাট্রিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয়ে ব্যক্তিগত কারণে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে বিদায় গ্রহণ করেন এবং প্রথম মহাযুদ্ধে যোগ দেন।
বিচিত্র জীবন: কাজী নজরুল ইসলাম লেটোর দলে যোগ দিয়ে অল্প বয়সেই গান ও নাটক লিখে খ্যাতিমান হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে যুদ্ধে তিনি সাধারণ সৈনিক (হাবিলদার) হয়ে যোগদান করেন। করাচিতে হেড কোয়ার্টার্সে তাঁর তিন বছর কাটে। যুদ্ধশেষে তিনি কলকাতায় ফিরে আসেন এবং ৩২ নম্বর কলেজ স্ট্রিটে ভারতীয় কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মুজাফফর আহমেদের সঙ্গে একত্রে বাস করতে থাকেন। সাম্যবাদী চিন্তার ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ অনুপ্রেরণা সঞ্চার করেন।
বিদ্রোহী নজরুল: বিশ শতকের তৃতীয় দশক থেকে বিদ্রোহাত্মক কবিতা নিয়ে নজরুলের বাংলা সাহিত্যে দীপ্ত আবির্ভাব। কবির বিখ্যাত 'বিদ্রোহী' কবিতা 'মোসলেম ভারত' নামক সাময়িক পত্রে প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সাহিত্যে সাড়া পড়ে যায়। এর ফলে বাংলাদেশের পাঠক সাধারণের কাছে তিনি হয়ে ওঠেন 'বিদ্রোহী কবি'। কবির এই বিদ্রোহী চেতনাকে ধারণ করে রচিত হয়েছে তাঁর 'অগ্নিবীণা', 'বিষের বাঁশী', 'শিকল ভাঙার গান', 'প্রলয় শিখা' প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ।
নজরুলের অন্যান্য গ্রন্থ: কাজী নজরুল ইসলাম রবীন্দ্রোত্তর কালের শ্রেষ্ঠ কবি, শ্রেষ্ঠ সুরকার ও সংগীত রচয়িতা। তাঁর অন্যান্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে সাম্যবাদী, সর্বহারা, সিন্ধুহিন্দোল, বুলবুল, চোখের চাতক, গীতি শতদল, পুবের হাওয়া, নতুন চাঁদ, রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ, রুবাইয়াৎ-ই-ওমর খৈয়াম, বাঁধন হারা, ফণিমনসা, ব্যথার দান, রিক্তের বেদন, মৃত্যুক্ষুধা, কুহেলিকা, যুগবাণী, রাজবন্দির জবানবন্দি, রুদ্রমঙ্গল, দুর্দিনের যাত্রী, ধূমকেতু প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশের জাতীয় কবি: ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নজরুলের গান ও কবিতা বিপুল অনুপ্রেরণা জোগায়। ১৯৭২ সালে কবিকে ঢাকায় এনে জাতীয় কবির মর্যাদা দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন দুরারোগ্য রোগ ভোগের পর এই মহান কবি ১৯৭৬ সালে ইন্তেকাল করেন। তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদ প্রাঙ্গণে সামরিক ও জাতীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হয়।
উপসংহার: কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা একদা বাংলা সাহিত্যে যে প্রবল উন্মাদনা ও প্রচণ্ড বিস্ফোরণ সৃষ্টি করেছিল, তার সম্পূর্ণ অবসান আজও হয়নি। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে 'বসন্তের অগ্রদূত' বলে অভ্যর্থনা করেছিলেন। তাঁর বিদ্রোহ, প্রেম, প্রকৃতি, সাম্যবাদ ও ভক্তিমূলক গান ও কবিতার মধ্য দিয়ে তিনি আমাদের হৃদয়ে চির জাগরুক থাকবেন।