• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

ডেঙ্গু জ্বর অথবা, প্রাণঘাতী ভাইরাস: ডেঙ্গু জ্বর অথবা, ডেঙ্গু জ্বর ও তার প্রতিকার

ভূমিকা: সম্প্রতিকালের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর আতঙ্ক ডেঙ্গুজ্বর। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সর্বত্র ডেঙ্গুজ্বর এক মহামারী রূপ ধারণ করেছিল। মৃত্যু হয়েছে অনেকের। সারাদেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল ডেঙ্গুজ্বরের আতঙ্ক। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে ভরে উঠছিল হাসপাতালগুলো।

ডেঙ্গুজ্বর: ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত এক ধরনের তীব্র জ্বর। এর সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। নেই প্যাটেন্টকৃত কোনো ওষুধ। উপসর্গের ওপর নির্ভরশীল হয়ে এর চিকিৎসা করতে হয়।

ডেঙ্গুজ্বরের প্রকারভেদ: ডেঙ্গুজ্বর সাধারণত দুধরনের হয়ে থাকে। যেমন- ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গুজ্বর ও হেমোরেজিক ডেঙ্গুজ্বর। এর ভাইরাসের আবার চারটি সেরোটাইপ আছে। এগুলো হচ্ছে DEN-1. DEN-2. DEN-3 এবং IDIEN-4. এ চারটি সেরোটাইপ থেকেই ডেঙ্গুজ্বর হতে পারে। তবে DEN-2 এবং DEN-3 বেশি মারাত্মক।

ডেঙ্গুজ্বর যেভাবে ছড়ায় ডেঙ্গুজ্বর দুই প্রজাতির স্ত্রী মশা দ্বারা ছড়ায়। এর একটি হচ্ছে এডিস এজিপটাই ও অন্যটি এডিস এলকোপিপটাস। সমুদ্রপৃষ্ঠের এক হাজার ফুট হতে আড়াই হাজার ফুট উচ্চতায় এগুলোর বিচরণ। এডিস এজিপটাই স্ত্রী মশা কোনো ব্যক্তিকে কামড় দিলে সে ব্যক্তি চার থেকে ছয়দিনের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়। তারপর আক্রান্ত ব্যক্তিটিকে জীবাণুবিহীন কোনো স্ত্রী এডিস মশা কামড় দিলে সে মশাটিও ডেঙ্গুজ্বরের জীবাণুবাহী মশায় পরিণত হয়। রাতের বেলা এসব মশা কামড়ায় না, কামড়ায় দিনের বেলা। সাধারণত ড্রেন, পুকুর বা নদীর পচা পানিতে এ প্রজাতির মশা ডিম পাড়ে না। ডিম পাড়ে প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম পাত্রের পানিতে। প্রাকৃতিক পাত্রের মধ্যে প্রধান হচ্ছে গাছের কোটর, বাঁশের গুঁড়ির কোটর ও পত্রবৃন্ত ইত্যাদি। আর পরিষ্কার ও বন্ধ পানির মধ্যে। যেমন- ফুলদানি, ফুলের টব, মাটির হাঁড়ির ভাঙা অংশ, গাড়ির টায়ার, মুখ খোলা পানির ট্যাংকি, জলকান্দা ইত্যাদি প্রধান।

ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ: সাধারণত ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে মাংসপেশি ও হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। দেহের তাপমাত্রা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রিতে ওঠে যায়। এছাড়া মাথা ও চোখের মাংসপেশিতে প্রচন্ড ব্যথা হয়। বমি বমি ভাব দেখা দেয়। জ্বর হওয়ার ৩/৪ দিন পর দেহে এক ধরনের ফুসকুড়ি ওঠে। মাংসপেশির খিচুনিতে কখনো কখনো রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। এছাড়া দেহ-মনে বিষণ্ণতার ছাপ পড়া বিচিত্র নয়। শিশু-কিশোররা এ জ্বরে আক্রান্ত হয় বেশি। ৮/১০ দিন ভোগার পর উপসর্গগুলো আস্তে আস্তে কেটে যেতে থাকে। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সময় লাগে বেশ কিছুদিন। ডেঙ্গুর রক্তক্ষরণ বা হেমোরেজিক জ্বর কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। এ জ্বরে আক্রান্ত হলে হঠাৎ করে দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায়। তিন থেকে সাতদিনের মধ্যে রক্তের সংবহনতন্ত্রে জটিলতা দেখা দেয়। সময় সময় বিকল হয়ে পড়ে। তখন রক্তনালীতে ও চামড়ার নিচে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। দাঁতের গোড়া বা দেহের অন্য কোনো স্থান দিয়ে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এর সাথে যোগ হয় রক্তবমি ও মলদ্বার দিয়ে রক্ত পড়া। মহিলাদের ক্ষেত্রে রক্তক্ষরণ হয় অনেকটা মাসিকের মতো।

ডেঙ্গুজ্বরের চিকিৎসা: ডেঙ্গুজ্বরের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা এখনো শুরু হয়নি। নেই পেটেন্টকৃত কোনো ওষুধ। উপসর্গ দেখে চিকিৎসা করতে হয়। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হলে রোগীকে পুরোপুরি বিশ্রামে রাখতে হয়। তবে অধিকাংশ ডেঙ্গুজ্বর সাত দিনের মধ্যে এমনিতেই সেরে যায়। অবশ্য চিকিৎসার ব্যাপারে সব সময় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই উত্তম। মারাত্মক উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ব‍্যবহার করা উচিত। এসপিরিন বা এ জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। রোগীকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষার ফলাফলের ওপর চিকিৎসা করতে হবে। মারাত্মক ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে পানিস্বল্পতা এবং রক্তক্ষরণের চিকিৎসার জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে আইভি স্যালাইন বা রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হতে পারে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধ: এডিস মশা ডেঙ্গুজ্বরের বাহক, তাই বাহক মশা দমন করাই ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধের প্রধান উপায়। বাসগৃহে ফুলের টব, অব্যবহৃত কৌটা, ড্রাম, নারিকেলের মালা, ডাবের খোসা, গাড়ির টায়ার ইত্যাদিতে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা ডিম পাড়ে। তাই এডিস মশা দমনে এসব পানি জমার স্থান ধ্বংস করতে হবে। বাড়িঘর ও তার আশপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মশারি ব্যবহার করে এডিস মশার কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এডিস মশা যেহেতু দিনে কামড়ায় সেহেতু দিনের বেলায়ও ঘুমাবার সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে।

উপসংহার: ডেঙ্গুজ্বরের ইতিহাস অনেক পুরনো। এর মহামারী প্রথম ঘটে ১৭৭৯ সালের মিসর ও জাভায়। ১৮৯৭ সালে অস্ট্রেলিয়া, ১৯২৮ সালে গ্রিস, ১৯৪৫ সালে লুসিয়ানা ও ১৯৮৬ সালে টেক্সাসে ডেঙ্গুজ্বর মহামারীরূপে দেখা দেয়। বাংলাদেশে গত কয়েক বছর যাবত ডেঙ্গু জ্বরের ব্যাপক প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। ২০২২ সালে প্রায় আড়াইশ মানুষ এ রোগে মৃত্যুবরণ করেছে। এর কোনো বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা না থাকায় এডিস মশা থেকে সাবধান থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।