- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ অথবা, কৃষিকাজে বিজ্ঞান অথবা, কৃষিকাজে বিজ্ঞানের অবদান
ভূমিকা: বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর বিকাশ মানবজীবনের সর্বত্রই কল্যাণ-স্পর্শ রেখেছে। সর্বত্র এখন বিজ্ঞানের অব্যাহত জয়যাত্রা। এই জয়যাত্রার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিজ্ঞানকে ব্যাপকভাবে জড়িত করা প্রয়োজন। কারণ গোটা বাংলাদেশই একটা কৃষিক্ষেত্র। বাংলাদেশের মানুষ প্রায় সবাই কৃষিনির্ভর। কৃষি আমাদের প্রাণ, কৃষি আমাদের ধ্যানজ্ঞান ও সাধনা। তাই আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে চাষাবাদ করা হলে একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে তেমনি সমৃদ্ধ হবে দেশ এবং স্বনির্ভর হবে দেশের মানুষ।
কৃষক ও কৃষি: বাংলাদেশের কৃষক আর কৃষি আজও সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। কৃষিব্যবস্থা এখনও প্রাচীন পদ্ধতিতেই চলছে। উন্নত কৃষিপদ্ধতির সঙ্গে এদেশের নিরক্ষর কৃষক সমাজ এখনও পরিচিত হয়ে উঠতে পারেনি। আধুনিক কৃষিব্যবস্থা প্রয়োগের মতো জ্ঞান ও অর্থ তাদের নেই। তাই ফসলের উৎপাদন বাড়ছে না।
বিজ্ঞানের দান: কৃষিক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ হওয়ায় কৃষির অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছে। চাষাবাদ পদ্ধতি এখন যান্ত্রিকীকরণ করা হয়েছে। বীজ উৎপাদন ও সংরক্ষণে বিজ্ঞানের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। সার, সেচ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ব্যবহার হচ্ছে। বিভিন্ন কৃষিজ ফসল নিয়ে গবেষণার মাধ্যমে উন্নতমানের এবং বেশি পরিমাণে ফসল ফলনের উপায়, উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব অগ্রগতির ফলে বিশ্বের বহু দেশে কৃষির উৎপাদন প্রচুর বেড়েছে।
কৃষিকাজে বিজ্ঞান: বিজ্ঞানের জয়যাত্রা আজ সর্বত্র অব্যাহত। যান্ত্রিক সরঞ্জামের আবিষ্কার কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লবের সূচনা করেছে। ট্রাক্টর ও পাওয়ার ট্রিলারের সাথে আরও নানা ধরনের যান্ত্রিক সরঞ্জামের আবিষ্কার মানুষ ও পশুশ্রমকে মুক্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে গোবর সার, কম্পোস্ট সার ও সবুজ সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সার, যথা- ইউরিয়া, টিএসপি ও. এমপি ইত্যাদি আবিষ্কারের ফলে একরপ্রতি উৎপাদন দ্বিগুণের ওপর চলে গেছে। সম্ভব হয়েছে ধান ও গমের ক্ষেত্রে উচ্চ ফলনশীল বীজ আবিষ্কার। এরপর বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট 'ইরি-৮' নামক উচ্চ ফলনশীল ধান আবিষ্কার করে এদেশের কৃষিক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বিজ্ঞানী নর্মান বেরলগ মাক্সিপাক উন্নত জাতের উচ্চ ফলনশীল গম আবিষ্কার করে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের এক মহতী উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। বিজ্ঞানের এই সাফল্য দেশের প্রায় সব ধরনের ফলমূল ও কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেই সাধিত হয়েছে। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগের মাধ্যমে পোকামাকড়, রোগবালাই দমন ও নির্মূল করার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের প্রয়োগ ঘটেছে অন্য সব ক্ষেত্রের মতোই।
আমাদের কৃষিকাজে বিজ্ঞান: উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের দেশে কৃষিকাজে বিজ্ঞানকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। আমাদের কৃষক সম্প্রদায় এখনও জমি চাষের জন্য গবাদিপশু চালিত লাঙল ব্যবহার করে। এ ব্যবস্থা যেমন কষ্টকর তেমনি সময়সাধ্য। এ কাজে আমরা ট্রাক্টর ব্যবহার করে অল্প পরিশ্রমে অধিক জমিতে চাষাবাদ করতে পারি।
কম্পিউটারের গঠন: কম্পিউটার প্রধানত দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। ১. হার্ডওয়্যার, ২. সফ্টওয়্যার। হার্ডওয়্যারে থাকে সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট, ইনপুট, আউটপুট ডিভাইস, স্টোর ডিভাইস। সফ্টওয়্যার হলো 'প্রোগ্রাম' সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয়।
কম্পিউটারের প্রকারভেদ ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে কম্পিউটার প্রধানত দুই প্রকার- ১. সাধারণ ব্যবহারিক কম্পিউটার ও ২. বিশেষ ব্যবহারিক কম্পিউটার। গঠন ও প্রচলিত নীতি অনুসারে কম্পিউটার তিন প্রকার- ১. এনালগ কম্পিউটার, ২. ডিজিটাল কম্পিউটার ও ৩. হাইব্রিড কম্পিউটার। ডিজিটাল কম্পিউটার আবার চার প্রকার- ১. মাইক্রো কম্পিউটার, ২. মিনি কম্পিউটার, ৩. মেইনফ্রেম কম্পিউটার ও ৪. সুপার কম্পিউটার।
বাংলাদেশে কম্পিউটারের ব্যবহার: ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম আণবিক শক্তিকেন্দ্রে IBM 1620 সিরিজের একটি কম্পিউটার প্রথম আনা হয়। নব্বই দশকের শুরু থেকে দেশে আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কম্পিউটার শিক্ষা শুরু হয়। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার বিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯১ সাল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে এবং ১৯৯৪ সাল থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার শিক্ষা পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
কম্পিউটার ও আধুনিক জীবন আধুনিক জীবনে কম্পিউটার একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বর্তমানে বিনোদন, শিক্ষা, চিকিৎসা সবকিছু কম্পিউটারের সাহায্যে পরিচালিত হচ্ছে। আধুনিক জীবনে মানুষ আগের মতো সময় ব্যয় করে গণনা, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ বা হিসাব রাখে না। আজ মানুষ এসব কাজে কম্পিউটারের ওপর নির্ভরশীল।
সভ্যতার অগ্রগতিতে কম্পিউটার সভ্যতার অগ্রগতিতে কম্পিউটার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। বর্তমান সভ্যতায় মানুষের জীবনযাত্রা সার্বিকভাবে প্রযুক্তিনির্ভর। কম্পিউটার এই সময়ে এক বিস্ময়কর প্রযুক্তি। মানুষের জীবনকে করে দিয়েছে সহজ। মানুষ এগিয়ে যাচ্ছে দ্বিগুণ গতিতে। ফলে সভ্যতারও উত্তরোত্তর উন্নয়ন- ঘটছে, বদলে যাচ্ছে মানুষের জীবনযাত্রা। যেখানে আগে গণনা, হিসাব, তথ্য প্রদান করতে দিনের পর দিন, মাস, বছর লেগে যেত এখন তা সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তের মধ্যে। কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে পৃথিবী চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়।
দৈনন্দিন জীবনে কম্পিউটারের ব্যবহার: বিভিন্ন কাজে আমরা প্রতিদিন কম্পিউটার ব্যবহার করছি। নিচে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
- শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটার শিক্ষা বিস্তারে কম্পিউটার বর্তমানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ঘরে বসে বিভিন্ন প্রোগ্রামের মাধ্যমে মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করছে। শিক্ষক শ্রেণিকক্ষে কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্য-উপাত্ত প্রদর্শন করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেন। যেকোনো গ্রন্থ কম্পিউটারে জমা রাখা যায়। বর্তমানে প্রকাশনা ক্ষেত্রে তথা পুস্তক প্রকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে কম্পিউটার।
- চিকিৎসাক্ষেত্রে কম্পিউটার: পুরনো সব চিকিৎসা পদ্ধতির পরিবর্তে এসেছে নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি, যার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান কম্পিউটারের। রোগ নির্ণয়ে আলট্রাসনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান, ইসিজি ইত্যাদি করতে ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটার। বর্তমানে অস্ত্রোপচার করার কাজেও কম্পিউটার ব্যবহৃত হচ্ছে। এ বিস্ময়কর যন্ত্রটি রোগ নির্ণয় করে মৃত্যুপথযাত্রী মানুষকে দিচ্ছে দ্রুত সুস্থ হওয়ার সুযোগ।
- তথ্য ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে কম্পিউটার ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহার করে মানুষ খুব সহজে যোগাযোগ করছে একে অন্যের সঙ্গে। আর এই ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহারের অন্যতম মাধ্যম হলো কম্পিউটার। এছাড়াও ই-মেইলের মাধ্যমে চিঠিপত্র আদান-প্রদান ও ফাইলপত্র প্রেরণে কম্পিউটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
- বিনোদনের ক্ষেত্রে কম্পিউটার: কম্পিউটারের মেমোরিতে জমা রাখা যায় নাচ, গান, সিনেমা, নাটক ইত্যাদির ভিডিও, যা পরবর্তীতে দেখে বা শুনে মানুষ ঘরে বসেই আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
- অপরাধ রোধে কম্পিউটার অপরাধ রোধ করতে বা অপরাধীকে ধরতে কম্পিউটার ব্যবহার করছে বর্তমানে নিরাপত্তা কর্মীরা। পূর্বে কম্পিউটারে অপরাধীর ছবি, হাতের ছাপ ও অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণ করে প্রয়োজনে ব্যবহার করছে অপরাধী শনাক্তকরণের কাজ। এছাড়াও অপরাধ রোধ করতে বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করা হয়।
- তথ্য সংরক্ষণে কম্পিউটার: সরকারি-বেসরকারি অফিস, আদালত, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য-সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। এতে অনেক দিন পর্যন্ত তথ্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।
- মহাকাশ গবেষণা মানুষ পৃথিবী ছেড়ে এখন পাড়ি জমিয়েছে মহাকাশে। যুগ যুগ ধরে যে আকাশ, গ্রহ-নক্ষত্র মানুষের কল্পনায় স্বপ্ন হয়ে থেকেছে, আজ বিজ্ঞানীদের হাতে তাও ধরা দিচ্ছে। চাঁদ, মঙ্গল গ্রহ বিভিন্ন জায়গায় মহাশূন্য যান প্রেরণ করছে। আর এর সবকিছু সম্ভব হয়েছে কম্পিউটারের কল্যাণে।
কম্পিউটারজনিত সমস্যা: সবকিছুরই ভালো ও খারাপ দিক থাকে। কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যায়। কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছে। কারণ সাধারণ জনশক্তির চেয়ে কম্পিউটারের কাজ করার ক্ষমতা বহুগুণ বেশি। অতিরিক্ত কম্পিউটার ব্যবহারের ফলে চোখের ও মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে। শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার গেমসে আসক্ত হয়ে পড়াশুনার ক্ষতিসাধন করে। তাছাড়া কম্পিউটার ব্যবহার করে অনেকে অনেক অন্যায়-অপরাধও করে।
উপসংহার: বর্তমানে মানুষ কম্পিউটারনির্ভর হয়ে পড়েছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য কম্পিউটারের ব্যবহার অপরিহার্য। কম্পিউটারের সঠিক ও পরিকল্পিত ব্যবহার আমাদের প্রযুক্তিকে আরও উন্নয়ন করতে পারে। বিভিন্ন সংকেত, খেলাধুলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও গবেষণায় বেশি বেশি করে কম্পিউটার ব্যবহার করা উচিত। এতে করে মানবসভ্যতার দ্রুত অগ্রগতি সাধিত হবে।