• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা বিষয়ক মাদকাসক্তির অপকারিতা ও প্রতিকার অথবা, মাদকাসক্তি ও তার প্রতিকার

ভূমিকা: বর্তমান সমাজের রন্দ্রে রন্দ্রে বিষবাষ্পের মতো ছড়িয়ে পড়েছে নেশার উপকরণ। নেশা 'সর্বনাশা জেনেও মানুষ এর প্রতি আসক্ত হয়। এর নীল দংশনে দংশিত হচ্ছে কোটি কোটি মানুষ। ড্রাগ বা মাদকাসক্তি অতি আধুনিক সভ্যতার ক্ষেত্রে এক নতুন অভিশাপ।

মাদকদ্রব্যসমূহ: মাদকের নেশা খুব দ্রুত মানুষকে আসক্ত করে, আর এই আসক্তির আকর্ষণ শক্তি এত তীব্র যে, একবার যাকে স্পর্শ করে তার পক্ষে আবার পূর্বের সহজ জীবনে ফেরা দুষ্কর। নারকোটিক ড্রাগ একজাতীয় মাদকদ্রব্য। হেরোইন, ব্রাউনসুগার, এল-এস-ডি, স্ম্যাক ইত্যাদি নানা রকম এর নাম। মানুষের নেশার জন্য রয়েছে আরও অনেক ড্রাগ। যেমন-গাঁজা, আফিম, চরস, ভাং, প্যাথেড্রিন, মরফিন, হাসিস, কোকেন ইত্যাদি ছাড়াও রয়েছে নানা রকম ঘুমের ট্যাবলেট। অধুনা আকাড়া কোকেনের সঙ্গে তামাক মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে নতুন ধরনের মাদকদ্রব্য। এ নতুন ড্রাগ 'বাজুকো' নামে ইউরোপের বাজারগুলোতে এখন বেশ জমজমাট। 'ইয়াবা' নামক এক ধরনের নেশাজাতীয় ট্যাবলেট বর্তমানে বেশ আলোচিত হচ্ছে। আর একটি ভয়ানক মাদক হলো হেরোইন।

মাদকাসক্তির কারণ: বেকারত্ব, হতাশা, বন্ধুবান্ধবের প্ররোচনায় কৌতূহল মেটাতেও মানুষ দু-একবার মাদক সেবন করতে গিয়ে আর বেরিয়ে আসতে পারেনি তার জাদুস্পর্শ থেকে। কোথাও কোনো মানসিক আঘাত পেলে সাময়িকভাবে ভুলে থাকার জন্যও মানুষ মাদক সেবন করে, কিন্তু পরে তা নেশায় পরিণত হয়। তাছাড়া চিরন্তন নতুনত্বের নেশা, নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের দুর্নিবার আকর্ষণ এবং সাময়িক ভালোলাগার বশবর্তী হয়েও অনেকে আসক্ত হয়।

মাদকাসক্তির অপকারিতা: মাদকাসক্তির অপকারিতা ও মাদকাসক্ত হওয়ার পরিণতি খুবই ভয়াবহ। ড্রাগে অভ্যস্ত ব্যক্তিদের আচার-আচরণের মধ্যে একটা খাপছাড়া ভাব পরিলক্ষিত হয়। চেহারাও হয়ে যায় রুক্ষ। খিদে না পাওয়া এবং দ্রুত ওজন হ্রাস এ আসক্তির প্রাথমিক লক্ষণ। দেখা যায়, তারা যখন তখন নিজের ঘরে ফিরে আসছে। সেই সঙ্গে বইপত্র, খাতা-কলম ও অন্যান্য দ্রব্য হারিয়ে ফেলা, বাথরুমে বেশি সময় কাটানো, চোখের তারা ছোট হয়ে যাওয়া, এমনকি চুরির অভ্যাসও দেখা যায়। চিকিৎসকদের মতে, মাদকাসক্তদের স্নায়ু ধীরে ধীরে অসাড় হয়ে যায়, কর্মক্ষমতা লোপ পায় এবং ক্রমে ক্রমে মৃত্যুর ঘণ্টাধ্বনি বেজে ওঠে তাদের জীবনে। ফলে সমাজজীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয়।

প্রতিকার: আমাদের তরুণ সমাজই মাদকাসক্তির কবলে আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এ থেকে তাদেরকে রক্ষা করতে না পারলে জাতির জন্য তা অভিশাপ হয়ে থাকবে। এর ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে বিশ্ব জুড়ে তা প্রতিরোধ করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মাদকদ্রব্যের উৎপাদন, আমদানি, বিক্রয় ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বিশ্বের সব দেশে আইন তৈরি করা হয়েছে।
নেশামত্ত ব্যক্তিদের সমাজে ফিরিয়ে আনতে হবে এবং চলমান সুস্থ জীবনের সঙ্গে তাদের মেলাতে হবে। এর জন্য মাদকাসক্ত রোগীদের উপযুক্ত চিকিৎসা প্রয়োজন। সেই সাথে প্রয়োজন রক্ষণাবেক্ষণ। এরপর রোগীদের জন্য প্রয়োজন পুনর্বাসন। পরিবারে ও সমাজে মানুষজনের মধ্যে যেন মাদকাসক্ত ব্যক্তি রোগমুক্ত হয়ে নিজেদের স্থিত করতে পারে, সেজন্য প্রয়াস থাকতে হবে।

উপসংহার: মাদকাসক্তির ভয়াবহ দাবানল আমাদের তরুণ সমাজে ছড়িয়ে পড়েছে। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের রোগ নিরাময়ের দায়িত্ব সকলকে গ্রহণ করতে হবে। মাদক ব্যবসায়ে লিপ্ত দুষ্কৃতদের কঠিন শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সাধারণ মানুষ যদি এ সমস্যা সমাধানে এগিয়ে না. আসে, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে না দেয়, তবে এই কদর্য ব্যাধির অপসারণ সম্ভব নয়। তাই দেশের সর্বস্তরের মানুষকে মাদকাসক্তির সর্বনাশা অভিশাপ সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।