- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
একজন মহাপুরুষের জীবনী অথবা, আমার প্রিয় শ্রেষ্ঠ মানুষ অথবা, হযরত মুহাম্মদ (স) অথবা, আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব
বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ (স) মানবকুলের আদর্শ পুরুষ। তিনি দিব্যকান্তি-সুদর্শন পুরুষ ছিলেন। তাঁর চেহারা থেকে প্রতিভা ও দৃঢ়সংকল্পের জ্যোতি স্ফুরিত হয়ে সকলকে মুগ্ধ করত। তাঁর বাক্য এমন কোমল, মধুর ও মনোহর ছিল যে, শত্রুরা পর্যন্ত তাঁর আকর্ষণীয় শক্তি অনুভব করে বলত, "মুহাম্মদের বাক্যে ইন্দ্রজাল আছে।" তিনি যেমন আধ্যাত্মিক বিষয়ে, তেমনি বাহ্য বেশবিন্যাসেও আদর্শস্থানীয় ছিলেন। কারও সঙ্গে দেখা হলে তিনিই অগ্রবর্তী হয়ে 'সালাম' দিতেন। এ সম্বন্ধে তাঁর কোনো আত্মাভিমান বা অহমিকা ছিল না।
তিনি মৃত্যুর কিছুকাল পূর্বে তাঁর সাহাবা মা'জকে ইয়ামেন রাজ্যের শাসনকর্তা করে পাঠান। তখন বহু উপদেশের মধ্যে সালামের অগ্রসরতা ও বাক্যে কোমলতা বিষয়েও তাকে উপদেশ দান করেন। অন্যের যাতে মনঃকষ্ট না হয় সেদিকে রীতিমতো লক্ষ রেখে কাজ করা বা কথা বলা ভদ্রতার লক্ষণ। তাই হযরত মুহাম্মদ (স) মা'জকে উপদেশ দিচ্ছেন, "আমি নিজের জন্য যা ভালোবাসি; তোমার জন্যও তা ভালোবাসি, নিজের জন্য যা অপ্রিয় জানি, তোমার জন্যও তা অপ্রিয় মনে করি। তুমিও আপন জীবন দ্বারা অন্যের বিচার করবে।"
তিনি সর্বদা হাসিমুখে থাকতেন এবং নির্দোষ আমোদ-প্রমোদ ভালবাসতেন। ভীষণ যুদ্ধ চলাকালেও তাঁর নির্মল কৌতুক রসিকতার পরিচয় পাওয়া যায়। ওহুদের যুদ্ধে যাওয়ার সময় তিনি খাজমার পুত্র রাফেয়কে নিতান্ত বালক বলে প্রথমত সঙ্গে নিতে 'চাননি। পরে তীরন্দাজির সুখ্যাতির জন্য তাকে সঙ্গে নিতে রাজি হলেন। তখন অমরের পুত্র সফরাও যুদ্ধে যাওয়ার জন্য বায়না ধরল। সে বলতে লাগল "রাফেয় থেকে আমি কুস্তিতে শ্রেষ্ঠ। ও যুদ্ধে যাবে আর আমি যেতে পারব না; কিছুতেই হবে না।"
হযরত এ ঘোর সংকটকালেও বললেন, "বেশ তোমরা দুজনে কুস্তি কর, দেখি কে হারে কে জিতে।" অমনি দুই বালক বীরের যুদ্ধ আরম্ভ হলো। সৌভাগ্যক্রমে সফরার জিত হল। তখন হযরত দুজনকেই যুদ্ধে যেতে অনুমতি দিলেন।
মহাপুরুষের গুরুগম্ভীর ভাব ও কর্মের পাশে এসব হাস্য-কৌতুক বেশ উপভোগের সামগ্রী সন্দেহ নেই। হযরত মুহাম্মদ (স) ছোট ছোট ছেলেমেয়েকে অত্যন্ত আদর করতেন, তাদের সঙ্গে মিষ্টি করে কথা বলতেন এবং সময় সময় তাদের সঙ্গে খেলাও করতেন। একবার নামাজের সেজদা দেওয়ার সময় তাঁর দৌহিত্র শিশু হুসাইন তাঁর ঘাড়ে চড়েছিলেন। হুসাইনের নেমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে তবে হযরত সেজদা থেকে মাথা তুলেন। তিনি অনেক সময় নিজে উট সেজে হাসান-হুসাইনকে নিজের পিঠে চড়াতে ভালোবাসতেন।
তাঁর আত্মসম্মানবোধ অতি প্রবল ছিল বলে ভিক্ষাবৃত্তিকে তিনি অতিশয় ঘৃণা করতেন। এক সময় এক ভিক্ষুক তাঁর কাছে উপস্থিত হওয়াতে তিনি তাকে একখানা কুঠার দান করে বলেছিলেন, "এটা নিয়ে কাঠ কেটে তা বেচে জীবনধারণ করো।" হযরত কারও দান গ্রহণ করতেন না, কিন্তু উপহার দিলে ফিরিয়ে দিতেন না।
"মানুষ মানুষের ভাই, সবাই পরস্পর সমান।"- এ নীতিবাক্য তিনি কেবল মুখেই প্রচার করেননি, কাজেও তিনি ভূরি ভূরি প্রমাণ দিয়ে গেছেন। তিনি দাসদাসীর কাছ থেকে যেমন সেবা গ্রহণ করতেন তাদেরও তেমনি সেবা করতেন। অনেক সময় দাসকে উটে চড়িয়ে নিজে পদব্রজে চলতেন। তাঁর বাড়ির দাসদাসীর জন্য স্বতন্ত্র রান্নার ব্যবস্থা ছিল না। সকলে একত্রে একই খাদ্য আহার করতেন। দাসদাসীরা পরিবারের অন্যান্য লোকের মতো সমুদয় সুবিধাই ভোগ করতেন।
ভক্ত হযরত বেলাল একজন দাস ছিলেন। তাঁকে তিনি আজান দেওয়ার কাজে নিযুক্ত করেন। একজন দাসের সঙ্গে তিনি আপন ফুপাতো বোনের বিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর অল্প কয়েকদিন পূর্বে দাসপুত্র ওসামার নেতৃত্বে হযরত আবু বকর (রা), হযরত উসমান (রা) এবং অন্য প্রধান প্রধান মুহাজির ও আনসারকে এক অভিযানে গমন করতে আদেশ দেন। তাতে অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। সেজন্য হযরত রোগক্লিষ্ট শরীরে মাথায় পট্টি বেঁধে মসজিদের মিম্বরে (বক্তৃতা মঞ্চে) আরোহণ করে বলেছিলেন, "হে মুসলমান বন্ধুগণ, সেনাপতি ওসামার সম্বন্দ্বে এসব কী বিগর্হিত কথা শুনতে পাচ্ছি? যদি তোমরা আজ ওসামার সেনাপতিত্ব হওয়া অনুচিত বলো, তবে মু'তার যুদ্ধে তার পিতার সেনাপতিত্ব অনুরূপ বোধ করে থাকবে। যথার্থই সে সেনাপতির উপযুক্ত ছিল, তদ্রুপ তার পুত্রও যোগ্য পাত্র। ওসামাও তোমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী, আমার অন্যতম সহচর। উভয়ে সৎক্রিয়াশীল, এক্ষণে ওসামার সম্বন্ধে আমার উপদেশ গ্রাহ্য করো।"
হযরত মুহাম্মদ (স) ছিলেন সংকল্পে অটল, অবিচল। কোনো প্রকার লোভ, অত্যাচার, ক্ষমতার মোহ কিছুই তাকে সংকল্প থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। সমুদয় বাধা-বিঘ্ন অতিক্রম করে নিজের জীবনকে তিনি শ্রীমণ্ডিত করতে পেরেছিলেন। তাঁর অন্তঃকরণে ছিল দুর্জয় সাহস, অসীম ধৈর্য, বিপদমুক্তিতে চিত্তপ্রসাদ। আর এসব মহৎ গুণের প্রভাবেই তিনি অনুচরদের আশার স্থল ছিলেন। আর এ কারণেই তিনি তাদের হৃদয়ে ভক্তির আসন অধিকার করতে পেরেছিলেন।