• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

একটি শীতের সকাল অথবা, শীতের সকাল অথবা, শীতের দিনের প্রথম প্রহর অথবা, শীতের সকালে বাংলার প্রাকৃতিক রূপ

ভূমিকা: ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। এমন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এ দেশ সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা। বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু। প্রতিটি ঋতুই ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়। শীত ঋতু আসে সম্পূর্ণ ভিন্ন রূপে। শুদ্ধ, কাঠিন্য, রিক্ততা, বিষাদের প্রতিমূর্তি বলা হয় শীত ঋতুকে। সমস্ত প্রকৃতিতে কেমন যেন একটা রুক্ষতা বিরাজ করে। ফুলের বাগান থাকে বিবর্ণ, পাতাশূন্য গাছ দাঁড়িয়ে থাকে হাহাকার নিয়ে। চারদিকে হিমেল হাওয়া ও কনকনে ঠান্ডায় কাঁপতে থাকে মানুষ। শীত ঋতুতে ঘন কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকাল মানুষের মনে এক স্বাতন্ত্র্য অনুভূতি সৃষ্টি করে।

শীতের বৈশিষ্ট্য: শীঢ় হলো বাংলাদেশের ষড়ঋতুর পঞ্চম ঋতু। গ্রীষ্মের ঠিক বিপরীত শীত ঋতু। বাংলা পৌষ ও মাঘ মাস মিলে শীতকাল। ইংরেজি ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতকালের বিস্তৃতি হলেও মূলত নভেম্বর থেকেই শীত অনুভূত হয়। শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে অনেক নিচে নেমে যায়। সারাদিন কুয়াশায় ঢেকে থাকে সূর্য। শীতকালে দিন ছোট আর রাত দীর্ঘ হয়। শীতের সকালে গাছপালা, লতা-গুল্ম সবকিছু শিশিরজলে স্নাত হয়। বিন্দু বিন্দু শিশির ঘাসে জমে থাকে।

দিন হয়ে যায় ছোট্ট এবং রাত হয়ে যায় বড়ো, কোমল হাওয়ায় হচ্ছে সবাই একটু জড়োসড়ো। ফুল-মূল-শাক-সবজি হাটে হঠাৎ উপস্থিত এই তো ঋতু শীত। শীতের সকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ঘন কুয়াশায় ঢাকা শীতের সকালের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অপূর্ব। শীতের সকাল নিস্তব্ধতায় মগ্ন হয়ে থাকে। ঘরের চালে, ঘাসের ডগায়, গাছের পাতায় শিশির জমে থাকে। সূর্যের আলো সেই শিশির বিন্দুর ওপর পড়লে মুক্তার মতো চিকচিক করে ওঠে। শীতের সকালে হলুদ সরষে ফুলের সৌন্দর্যে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়। মুগ, মসুর, ছোলা, অড়হরের কচি পাতা একধরনের কোমলতা, স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে দেয়। গ্রাম ও শহরভেদে শীতের সকালের রূপ ভিন্ন ভিন্ন হয়।

গ্রামে শীতের সকাল: গ্রামেই শীতের আসল সৌন্দর্য দেখা যায়। গ্রামীণ প্রকৃতিতেই ধরা পড়ে শীতের রূপ-সৌন্দর্য। কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকে পথ-ঘাট, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ। গ্রামের মসজিদে আজান হয়, দূর থেকে ভেসে আসে মিষ্টি সেই আওয়াজ। চাদর গায়ে কর্মব্যস্ত মানুষ দিন শুরু করে। গ্রামের এপাড়া ওপাড়ার খেজুরগাছ থেকে মিষ্টি রস সংগ্রহ করেন গাছিরা। শীতের সকালে কৃষকবধূদের ব্যস্ততাও অনেক। তারা রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেন। সেই গুড় দিয়ে পিঠা, পায়েস্ তৈরি করেন। গ্রামের মানুষেরা খড়-কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহায়। চারদিক খেজুরের রস ও গুড়ের গন্ধে মৌ মৌ করে। ছেলেমেয়েরা মিষ্টি রোদ উঠলে রোদে বসে গুড়, মুড়ি ও মায়ের হাতে তৈরি বিভিন্ন পিঠা-পুলি খায়। কৃষকরা তীব্র শীত উপেক্ষা করে মাঠে যায়। এ সময় গ্রামে প্রচুর শাকসবজি জন্মে। সকালে কৃষক সেসব শাকসবজি সংগ্রহ করেন হাটে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে।

শহরে শীতের সকাল: গ্রামের মতো শহরে শীতের সকাল তেমন বৈচিত্র্যময় নয়। শহরে ঘনবসতি, রাস্তা-ঘাট, দালান-কোঠা ও কলকারখানার কারণে শীতের তীব্রতাও কম। শহরের মানুষ সাধারণত একটু দেরি করে ঘুম থেকে ওঠে, তাই তাদের সকালটা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। ঘুম থেকে উঠে শীতের কাপড় পরে নাশতা করে তারা অফিসের দিকে রওয়ানা দেয়, ফিরে আসে সন্ধ্যায়। কুয়াশা ভেজা মেঠোপথে হাঁটার আনন্দ শহরের লোকজন উপভোগ করতে পারে না। তারা কুয়াশায়াত গাছপালা দেখার আনন্দ উপভোগ করতে পারে না। যান্ত্রিক জীবনে তারা অভ্যস্ত।

শীতের সকালে পিঠা উৎসব: শীতের সকালে গৃহবধূ পরিবারের জন্য নতুন ধানের চাল আর মিষ্টি রস ও গুড় দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পায়েস তৈরি করেন। বিশেষ করে ভাপা পিঠা, পুলি পিঠা, ক্ষীর, রস-চিতই এ সময় বেশি তৈরি করা হয়। এগুলো শীতের পিঠা। মৃদু রোদে পরিবারের সবাই মিলে পিঠা খেতে বসে। প্রতিটা বাড়িতে যেন একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হয়। এ সময় পিঠা উৎসবে যোগ দেয় আত্মীয়স্বজনরা। মেয়েরা নাইয়র আসে পিঠা খাওয়ার নিমন্ত্রণে। রাস্তার ধারে সকালে চাঁদোয়া টাঙিয়ে পিঠা উৎসব করে শহরের মানুষ।
শীতের সকালে দরিদ্র মানুষের কষ্ট: শীতের সকালে ধনী মানুষরা বিভিন্ন রকমের গরম পোশাক পরে। এ সময় পোশাকে তাদের বিলাসিতা ফুটে ওঠে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষরা জরাজীর্ণ পোশাকে খুব কষ্টে দিন কাটায়। পাতলা কাপড় গায়ে তারা গুটিসুটি মেরে থাকে। ঠকঠক করে কাঁপতে থাকে মানুষ। একটু উষ্ণতার জন্য সূর্যের কাছে প্রার্থনা করে, মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসার জন্য। হাড়কাঁপানো শীতে সাধারণ দরিদ্র মানুষরা জড়তা ও বিষন্নতায় ভোগে। এসব মানুষের কথাই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য বলেছেন-

হে সূর্য, তুমি তো জানো, আমাদের গরম কাপড়ের কত অভাব!
সারারাত খড়কুটো জ্বালিয়ে এক টুকরো কাপড়ে কান ঢেকে,
কত কষ্টে আমরা শীত আটকাই।

শীতের সকালে যানবাহন চলাচলে অসুবিধা: ঘন কুয়াশায় চারদিক আবৃত থাকে শীতের সকালে। সামান্য দূরের কিছুও চোখে পড়ে না। মনে হয় সামনে কিছুই নেই। ফলে এ সময় যানবাহন চলাচলে অসুবিধা হয়। চালকরা প্রায়ই ভুল করে, যাত্রীরা দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ কারণে নদীপথে নৌ চলাচলেও বিঘ্ন ঘটে। মানুষ হেঁটে রাস্তা পার হতে গিয়েও দুর্ঘটনার শিকার হয়।

উপসংহার: প্রতিটি বিষয়েরই সুবিধা-অসুবিধা থাকে। শীতের সকালেও রয়েছে। তা সত্ত্বেও সবকিছু ছাপিয়ে শীতের সকাল আমাদের অনুভূতিতে এক অন্যরকম ভালো লাগা সৃষ্টি করে। শিশির ভেজা ঘাস, মেঠোপথ, মৃদু রোদের স্পর্শ আমাদের মনে সুখানুভূতি জাগায়। শীতের সকালের স্থায়িত্ব কম, কিন্তু মানুষের মনে কোমল পরশ বুলিয়ে দেয়। তাই শীতের সকাল বাঙালির মনের গভীরে নাড়া দেয়।