- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস অথবা, মহান একুশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অথবা, বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস
ভূমিকা: আমরা বাঙালি। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বিদেশি শাসকরা এ ভাষাকে যুগে যুগে পদানত করতে চেয়েছে। তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এদেশের মানুষ, করেছে ভাষা আন্দোলন। অনেক রক্ত ঝরেছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিতে অকাতরে জীবন দিয়ে, তার বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলা ভাষার মর্যাদা। একুশে ফেব্রুয়ারি আজ 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃত।
ভাষা আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস: বাঙালির মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত প্রতিবাদ ও আন্দোলন করতে হয়েছে। ১৯৪৮ সালের ২৫শে ফেব্রুয়ারি করাচিতে গণপরিষদ সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন। কিন্তু এর পরে গভর্নর জেনারেল মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে এক জনসভায় 'উর্দুই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে' বলে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি একই কথা পুনর্ব্যক্ত করলে ছাত্ররা এর তীব্র প্রতিবাদ জানায়। কারণ সমগ্র পাকিস্তানে শতকরা ৫৬ ভাগ মানুষের মুখের ভাষা বাংলা, আর 'উর্দু ভাষায় কথা বলে মাত্র ৮ ভাগ।
শাসকগোষ্ঠীর এই হীন ষড়যন্ত্রের কাছে বাঙালি মাথা নোয়ায়নি। ছাত্র-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক সকল বাঙালি মাতৃভাষা রক্ষার জন্য রাজপথে নেমে আসে। ১৯৫০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ও ১৯৫২ সালে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী খাজা 'নাজিমউদ্দীন একই ঘোষণা দিলে বিদ্রোহের আগুন হাজারো শিখায় জ্বলে ওঠে। প্রতিবাদী ছাত্রসমাজ আন্দোলনের ডাক দেয়। ৪ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ২১শে ফেব্রুয়ারিতে 'রাষ্ট্রভাষা দিবস' পালনের কর্মসূচি প্রদান করলে সারা দেশ প্রতিবাদে ফেটে পড়ে। কিন্তু শোষক শ্রেণি ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাত থেকে ১৪৪ ধারা জারি করে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা ২১ ফেব্রুয়ারিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ নির্মমভাবে গুলি চালায়। এতে শহিদ হন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউরসহ অনেকে। মাতৃভাষা প্রেমিক বাঙালি রক্ত ও জীবন দিয়ে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি: ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারিকে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাঙালি জাতির জন্য এ এক বিরাট গৌরব। একদিকে সারা বিশ্বের মানুষ জানতে পারবে 'বাংলাদেশ' নামে একটি দেশের কথা, বাঙালি জাতি ও বাংলা ভাষার কথা, অন্যদিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দেশের ভাষাগুলো মর্যাদা লাভের পথ খুঁজে পাবে। বলা যায়, ভাষার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' এক বিরাট ভূমিকা পালন করবে।
মাতৃভাষা দিবসের আনন্দ উৎসব: একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হয় মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিনে প্রভাতফেরিসহ আলোচনা, নৃত্য, সংগীত, আবৃত্তি ইত্যাদি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পালিত হয় এ উৎসব।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস' পালন: জাতিসংঘের মহাসচিব 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'টি পালন উপলক্ষে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে বার্তা প্রেরণ করেন। বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি উদ্যাপন করে। তাই বাংলাদেশের ইতিহাসে এ দিনটি অব্যয় ও অক্ষয় হয়ে থাকবে।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বাংলাদেশের গুরুত্ব: আজ আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি, আমরাই প্রথম জাতি, মাতৃভাষা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রক্ত দিয়েছি, অকাতরে জীবন দিয়েছি। মাতৃভাষার জন্য রক্ত এবং জীবন দেওয়ার ইতিহাস পৃথিবীতে আর নেই। সেই রক্ত বৃথা যায়নি। বিশ্ববাসী স্বীকৃতি দিয়েছে আমাদের মাতৃভাষাকে। একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি লাভের সাথে সাথে বাংলাদেশের গুরুত্বও বৃদ্ধি পেল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। সেই সাথে বাংলা ভাষা হলো গৌরবের ভাষা।
উপসংহার: আমাদের জাতীয় জীবনে গত শতক ছিল আশা-আকাঙ্ক্ষা, সংগ্রাম, যুদ্ধে ভরা টালমাটাল দিন। ইতিহাস থেকে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি লাখ লাখ জীবনের বিনিময়ে। বাংলা মায়ের সন্তানেরা বিশ্বের বুকে নতুন শতকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর জন্য আজ দৃঢ়প্রত্যয়ী। আর সেজন্য আমাদের জীবনের সর্বক্ষেত্রে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাতৃভাষার প্রচলন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।