• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

কর্মমুখী শিক্ষা অথবা, বৃত্তিমূলক শিক্ষা অথবা, কারিগরি শিক্ষা অথবা, জীবনমুখী শিক্ষা অথবা, কর্মমুখী শিক্ষার উপযোগিতা

ভূমিকা: শিক্ষা মানুষের মধ্যে সুপ্ত মানসিক শক্তির বিকাশ ঘটিয়ে তাকে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। আবার, উপযুক্ত শিক্ষাই কোনো জাতি বা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়ে তোলে এবং তার ক্রমোন্নতির অপরিহার্য সহায়ক হয়ে ওঠে। সে রকম শিক্ষাই হলো কর্মমুখী শিক্ষা বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা। আমাদের দেশে, ব্যাপক হারে কর্মমুখী শিক্ষা প্রবর্তন করা প্রয়োজন।

কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা: শিক্ষাকে কেবল আত্মিক উন্নয়নের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে, সামাজিক প্রয়োজনের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে। কারণ পরবর্তীকালে কৃষি, বয়ন, মৃৎশিল্প, ধাতুশিল্প প্রভৃতি অপরিহার্য সামাজিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর ভার অর্পিত হয় বংশানুক্রমে ঐ কাজগুলোর জন্য নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর ওপর। তাই প্রাচীনকালে গুণানুযায়ী কর্মবিভাগের ব্যবস্থা নির্দিষ্ট হয়েছিল। ফলে, সমাজের মধ্যে কর্মভিত্তিক বিন্যাস ঘটে এবং পুরুষানুক্রমে একই উৎপাদনে নিযুক্ত থাকার কারণে উৎপাদিত বস্তুর গুণ বৃদ্ধি ও বৈচিত্র্য সৃষ্টি হয়। প্রাচীন গ্রামীণ সমাজে এভাবে কর্মমুখী শিক্ষা বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রচলিত ছিল। প্রধানত লোকজ শিল্পীদের দ্বারা মাটি, ধাতু, কাঠ, চর্ম, শংখ, সুতা ইত্যাদির ব্যবহার সমগ্র সমাজের প্রয়োজন মেটাত।

বর্তমান বিশ্বে কর্মের যে মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাতে আমাদেরকেও অংশগ্রহণ করতে হবে। কৃষিকাজ, কামারের কাজ, কুমারের কাজ, ছুতোরের কাজ, চামড়ার কাজ, বাঁশ ও বেতের কাজ, প্লাস্টিকের কাজ, তাঁতের কাজ, ক্ষুদ্র যন্ত্রপাতি তৈরির কাজ, রেডিও-টেলিভিশন, কম্পিউটার মেরামতের কাজ ছাড়াও আরও অনেক বৃত্তিমূলক কাজ রয়েছে।

যে শিক্ষা অর্জন করে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা যায় এবং যার মাধ্যমে সহজে জীবিকা নির্বাহ করা যায় তা-ই হলো কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা। কর্মমুখী শিক্ষা লাভ করলে পরমুখাপেক্ষী হতে হয় না, বেকার থাকতে হয় না; বরং এ ধরনের শিক্ষা কর্মপ্রেরণা যোগায় এবং নিজের অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে দেশ ও জনগণের সেবা করা যায়।

আমাদের দেশে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার সম্ভাবনা কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষায় যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে আমাদের দেশে। কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহণে কৃষিকাজ, কলকারখানায় কাজ পেতে সুবিধা হয় এবং দক্ষতা বৃদ্ধি করা যায়। সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করা হয়, তবে তা দেশের জন্য সুদূরপ্রসারী কল্যাণকর ফল বয়ে আনতে সক্ষম হবে। ফলে দেশে বেকারের সংখ্যা কমবে এবং সুদক্ষ কর্মী বা কারিগর সৃষ্টি হবে, যারা নিজেদের দক্ষতায় ভাগ্যকে গড়ে নিতে পারবে। কাজেই আমাদের দেশের বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থার সম্ভাবনাসমূহ যাচাই করে যদি সুষ্ঠু পরিকল্পনাভিত্তিক কর্মসূচি হাতে নেয়, তবে ব্যাপক সাড়া জাগাতে পারবে বলে আশা করা যায়।

কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি: আমাদের দেশ, বিভিন্ন দিক থেকে অনগ্রসর ও কুসংস্কারাচ্ছন্ন। কর্মমুখী শিক্ষাকে আমাদের দেশে কোনো রকম গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ শিক্ষাকে তুচ্ছ বলে মনে করা হয়। সাধারণত অভিজাত শ্রেণি বা উচ্চ শ্রেণির অনেকে এমনকি মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকেরাও এ শিক্ষার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখায় না। এ ধরনের মানসিকতা আমাদের সমাজ থেকে দূর করে কর্মমুখী শিক্ষায় মানুষের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। সাধারণ শিক্ষার চেয়ে বৃত্তিমূলক কর্মমুখী শিক্ষা যে বেশি উপকারী এই চেতনা সৃষ্টি করতে না পারলে আমাদের ব্যক্তিগত বা জাতীয় জীবনে উন্নতি ও অগ্রগতি সম্ভব নয়। রেডিও, টেলিভিশন, পত্রপত্রিকা ফেসবুক বা অন্যান্য প্রচার মাধ্যমের সাহায্যে মানুষের মধ্যে এই চেতনাবোধ সৃষ্টি করতে হবে।

কর্মমুখী শিক্ষার উপকারিতা: কর্মমুখী শিক্ষাকে ব্যাপকভাবে প্রবর্তনের ক্ষেত্রে নানা রকম সমস্যা থাকলেও এর উপকারিতা অস্বীকার করা যায় না। কর্মমুখী শিক্ষার নানা রকম উপকারিতা রয়েছে; যেমন- (ক) এ শিক্ষা অর্জন করলে বেকারত্বের অভিশাপ হ্রাস পাবে, (খ) সহজে কাজ পাওয়া যায়, (গ) উপার্জনশীল হওয়া যায়, (ঘ) ব্যক্তিস্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ থাকে, (ঙ) সাধারণ শিক্ষার ওপর-চাপ কমে আসবে, (চ) স্বাবলম্বী বা স্বনির্ভর হওয়া যায়, (ছ) জীবনের হতাশা, শূন্যতাবোধ এবং ব্যর্থতাজনিত গ্লানি থেকে মুক্ত হওয়া যায়, (জ) নতুন নতুন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায় ইত্যাদি।

উপসংহার: বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ, প্রতিযোগিতার যুগ। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এখন নিজেকে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার সময়। তাই আমাদের উচিত বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা গ্রহণ করে, নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নের সাথে সাথে জাতীয় জীবনেও অবদান রাখার সংকল্প করা। তাহলে একদিকে যেমন নিজের উন্নতি নিশ্চিত হতে পারে, তেমনি হতে পারে দেশের কল্যাণ।