- হোম
- স্কুল ১-১২
- সাধারণ
- অষ্টম শ্রেণি
প্রবন্ধ রচনা
পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।
প্রবন্ধ রচনা
করোনা ভাইরাস অথবা, কোভিড-১৯ অথবা, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস অথবা, বৈশ্বিক মহামারী করোনা
ভূমিকা: পৃথিবীতে কালে কালে বহুবার বহু নতুন কিছুর আবির্ভাব ঘটেছে, এখনও ঘটছে। সেসব বস্তু ইতিবাচক বা শুভহলে পৃথিবী ও পৃথিবীর মানুষের জন্য কল্যাণকর হয়েছে। আবার অশুভ হলে তা ভয়ানক ক্ষতি ডেকে এনেছে। এ পৃথিবীতে বহুবার নানা রকম রোগ মহামারী আকার নিয়েছে, অসংখ্য মানুষের মৃত্যু ঘটিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলকে শ্মশানে পরিণত করেছে। বর্তমানে এমনই একটি ভয়াবহ রোগের ভাইরাস সারা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করে লক্ষ লক্ষ প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এবং এখনও নিচ্ছে, যার নাম করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯।
করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ কী করোনা ভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস যা এর আগে মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। এই ভাইরাসে বিশ্বব্যাপী প্রায় চার লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৬২ লাখ। করোনা ভাইরাস নামটির উৎপত্তি লাতিন শব্দ করোনা থেকে, যার অর্থ 'মুকুট' বা 'হার'। ভাইরাসের উপরিভাগ প্রোটিনসমৃদ্ধ থাকে। এই প্রোটিন সংক্রমিত হওয়া টিস্যু বিনষ্ট করে। এই ভাইরাসের আরেক নাম নভেল করোনা ভাইরাস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এটির আনুষ্ঠানিক নাম দিয়েছে 'কোভিড-১৯'।
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব অনেক সময় কোনো একটি প্রাণী থেকে ভাইরাস এসে মানব শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে। সাম্প্রতিক ভয়াবহ ভাইরাসটির উৎস কোনো প্রাণী বলেই মনে করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। মানুষের এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে চীনের উহান শহরে। সামুদ্রিক মাছ বিক্রির পাইকারি বাজারে। করোনা পরিবারে ছয়টি ভাইরাস আগে পরিচিত থাকলেও এখন যে ভাইরাসটিতে মানুষ সংক্রামিত হচ্ছে তা নতুন। এই নতুন ভাইরাসটির সংক্রমণ বিশ্বব্যাপী মারাত্মক রূপ নেওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য, সংস্থা এটিকে বিশ্ব মহামারী ঘোষণা করেছে।
করোনা রোগের লক্ষণসমূহ: রেসপিরেটরি লক্ষণ ছাড়াও জ্বর, সর্দি, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাই করোনা রোগের প্রধান লক্ষণ। সাধারণ শুষ্ক কাশি ও জ্বরের মাধ্যমেই শুরু হয় এ ভাইরাসের আক্রমণের উপসর্গ। অল্প সময়ের মধ্যেই এটি ফুসফুসে আক্রমণ করে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেয়। হাঁচি বা কাশির মাধ্যমেই এ রোগ ছড়ায়। সাধারণত রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে গড়ে পাঁচ দিন সময় লাগে।
করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো জ্বর, অবসাদ, শুষ্ক কাশি, বমি হওয়া, শ্বাসকষ্ট, গলাব্যথা, অঙ্গ বিকল হওয়া, মাথাব্যথা, পেটের সমস্যা। বিশ্বজুড়ে এটির ভয়াবহ প্রভাব: বিশ্বজুড়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কোটির বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এবং ৬৬ লাখের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। করোনার ছোবলে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১০ কোটি এবং মৃত্যুবরণ করেছে ১১ লাখের অধিক। ব্রাজিলে আক্রান্ত হয়েছে ৩.৫ কোটির অধিক এবং মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ৭ লাখ। ভারতে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৪.৪ কোটি এবং মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ৫.৩ লাখ। মেক্সিকোতে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ৭ কোটি এবং মৃত্যুবরণ করেছে ৩.৩ লাখের অধিক মানুষ। বাংলাদেশে আক্রান্ত হয়েছে ২০ লাখের অধিক এবং মৃত্যুবরণ করেছে প্রায় ৩০ হাজার।
বাংলাদেশে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ: বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও এর প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে এদেশে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন।
নিচে এগুলো উল্লেখ করা হলো-
১. করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে সরকার সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠানে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করলেও পরবর্তীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যতীত স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্প পরিসরে সব প্রতিষ্ঠান খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
২. করোনা সংক্রমণের প্রথম দিকে গণপরিবহন বন্ধ ঘোষণা করা হলেও পরবর্তীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্পসংখ্যক যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
৩. প্রথম দিকে কেবল ওষুধের দোকান ও জরুরি প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্যের দোকান খোলা থাকলেও পরবর্তীতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বল্পপরিসরে সব ধরনের দোকানপাট ও ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
৪. জনসাধারণ যাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বক্ষণ তাদের দায়িত্ব পালন করেছেন।
৫. সরকার করোনার কারণে কর্মহীন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের খাদ্য সহায়তা ও অর্থ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।
৬. রাজধানীসহ সারা দেশে করোনার পরীক্ষা ও চিকিৎসার জন্য পরীক্ষাগারসহ হাসপাতালের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
৭. করোনা পরীক্ষার টেকনিশিয়ানসহ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
৮. পরীক্ষাগার ও হাসপাতালগুলোতে করোনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ ও চিকিৎসাসামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে।
৯. ইংল্যান্ড ব্যতীত ইউরোপ থেকে যাত্রী আগমনে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়েছে এবং বিমান চলাচলও স্থগিত করা হয়েছে। DE
১০. বিদেশফেরত যাত্রীসহ দেশের ভেতরে সন্দেহভাজন লোকদের হোমকোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের উপায়: করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে এখন পর্যন্ত রক্ষা পাওয়ার একমাত্র উপায় হলো অন্যদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ হতে না দেওয়া। এর জন্য সতর্ক অবস্থানে থাকতে এবং কার্যকর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। বিশেষ করে-
বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া এবং হাত ধুতে সবাইকে উৎসাহিত করা। ফেস মাস্ক (মুখোশ) ব্যবহার করা। ঘরে থাকা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা তথা অন্যজন থেকে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা।
ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও প্রয়োগ: বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে দ্রুত সংক্রমিত হওয়া করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়েছে এবং তা কার্যকরভাবে প্রয়োগও শুরু হয়েছে। এ পর্যন্ত দশটি প্রতিষ্ঠানের আবিষ্কৃত ভ্যাকসিন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রয়োগের ক্রমানুসারে এগুলো হচ্ছে- অক্সফোর্ড, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, বায়োনটেক, মর্ডানা, সিনোফার্ম, স্পটনিক ভি, সিনোভ্যাক, জ্যানসেন, ইপিআইভ্যাক-করোনা, কোভ্যাকসিন (ভারত বায়োটেক)। এর বাইরেও আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের টিকা উৎপাদন ও প্রয়োগের পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু পৃথিবীর ৭৭০ কোটি মানুষকে কার্যকরভাবে টিকা দিতে যে পরিমাণ ভ্যাকসিন উৎপাদন প্রয়োজন তা বিরাট একটা চ্যালেঞ্জ। তারপরও বিশ্বে ৮০০ কোটির বেশি ডোজ টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে চীনে প্রয়োগ করা হয়েছে ২০০ কোটি ডোজেরও বেশি এবং ভারতে ১০০ কোটি ডোজেরও বেশি।
বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রম টিকা পাওয়ার পরপরই বাংলাদেশে টিকা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকা, যুক্তরাষ্ট্রের ফাইজার ও মর্ডানা এবং চীনের তৈরি সিনোফার্মের ১০ কোটি ডোজেরও বেশি টিকা বাংলাদেশে প্রয়োগ করা হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে জরুরি সেবাদানকারী ব্যক্তিবর্গ, তারপর পর্যায়ক্রমে বেশি বয়সী ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষকে টিকা প্রদান করা হয়েছে। এরপর স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার প্রয়োজনে প্রথমে শিক্ষক-কর্মচারী এবং পরে শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হয়েছে। বর্তমানে ১২ বছরের বেশি বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা প্রদান করা হচ্ছে।
উপসংহার: বিশ্বব্যাপী মারাত্মক আতঙ্ক ছড়ানোর নাম করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯। আতঙ্কের কারণ, এই অদৃশ্য ভাইরাসটি হাঁচি-কাশির মাধ্যমে দ্রুত বিস্তার লাভ করে এবং মারাত্মক সংক্রমণের মাধ্যমে মানুষের মৃত্যু ঘটায়। রূপ পরিবর্তনের কারণে এই ভাইরাস দিন দিন বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সহসা নির্মূল হবে না। পৃথিবীর মানুষ কবে ভয়ঙ্কর এই ভাইরাসের আতঙ্ক থেকে, সংক্রমণের ঝুঁকি থেকে এবং মৃতের মিছিল থেকে রেহাই পাবে তার জবাবের জন্য ভবিষ্যতের দিকে তাকানো ছাড়া উপায় নেই।