• হোম
  • স্কুল ১-১২
  • সাধারণ
  • অষ্টম শ্রেণি

প্রবন্ধ রচনা

পাঠ্যবিষয় ও অধ্যায়ভিত্তিক একাডেমিক প্রস্তুতির জন্য আমাদের উন্মুক্ত শিক্ষায় অংশগ্রহণ করুন।

Back

প্রবন্ধ রচনা

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও এর প্রতিকার অথবা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও তার প্রভাব অথবা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও জনজীবনে দুর্ভোগ

ভূমিকা: তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এদেশের শতকরা ৮০ ভাগেরও বেশি লোকের জীবনযাত্রার মান নিম্নমানের। কারণ তাদের আয় কম। এছাড়াও এদেশ সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জনসংখ্যার ক্রমবৃদ্ধি ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত। এমতাবস্থায় দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনসাধারণের জীবনকে করেছে দুর্বিষহ। কালোবাজারি, মুনাফাখোরি, মজুতদারি প্রভৃতি অসামাজিক কার্যকলাপ সামাজিক পরিস্থিতিকে করে তুলেছে বিপর্যন্ত।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ:

১. জনসংখ্যা বৃদ্ধি: বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি দরিদ্রতম দেশ। মাত্র ৫৬ হাজার বর্গমাইল আয়তনবিশিষ্ট এদেশে ১৬ কোটি লোক বাস করে। আয়তনের তুলনায় এ সংখ্যা খুবই মারাত্মক। কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে যে উৎপাদন হয়ে থাকে তা দিয়ে এ বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই জোগানের চেয়ে চাহিদা বেশি হওয়ায় দ্রব্যমূল্য খুব দ্রুত বাড়তে থাকে।

২. কৃষি উৎপাদন হ্রাস: অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি এবং বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন হ্রাস করে থাকে। এ হ্রাসের ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটতে বাধ্য। কৃষকরা অনেক সময় মৌসুমের পূর্বে স্থানীয় সুদখোর মহাজন, টাউটবাটপারের কাছ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয় এবং তা পরিশোধ করার সময় তার জমির ফসল উক্ত মহাজনের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়। এভাবে উৎপাদিত কৃষি ফসল মজুতদারের হাতে কুক্ষিগত হয়, যার ফলে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটে।

৩. রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হলে অর্থাৎ, রাজনৈতিক আন্দোলন, ধর্মঘট, হরতাল, মারামারি, রাহাজানি ইত্যাদি কারণে একস্থান থেকে অন্যস্থানে পণ্যসামগ্রী পরিবহনে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ফলে উৎপাদিত পণ্যসামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়, যা পরবর্তীতে দ্রব্যের সংকট সৃষ্টি করে এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী; যেমন- চাল, ডাল, শাকসবজি, মাছ, মাংস ইত্যাদির দাম বেড়ে যায়।

৪. সামাজিক ব্যবস্থা: মানুষ যেহেতু সামাজিক জীব সেহেতু সমাজে সকলের সাথে তাল মিলিয়েই চলতে হয়। মানুষের এ তাল মিলিয়ে চলার প্রবণতা থেকেই জন্ম নেয় প্রতিযোগিতা। এভাবে প্রতিযোগিতার ফলে জিনিসের দাম বৃদ্ধি ঘটে থাকে।

৫. প্রশাসনিক দুর্নীতি: অবৈধ ও দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের নাকের ডগার ওপর দিয়েই অবৈধভাবে জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধি করে থাকে; কিন্তু প্রশাসন তা দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। এছাড়া ঘুষ খেয়ে এসব অবৈধ ব্যবসায়ীকে শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দেওয়ার নজিরও কম নয়। কাজেই যারা দুর্নীতি করে দু পয়সা বাড়তি রোজগার করে থাকে ভারাই বাজারে গিয়ে বেশি দামে দ্রব্যসামগ্রী ক্রয় করে, যার ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।

প্রতিকার:

  • জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধ করতে হবে।
  • রাজনৈতিক পরিস্থিতি যাতে স্থিতিশীল থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • কালোবাজারি ও চোরাকারবারি রোধ করতে হবে।
  • চাঁদাবাজি ও মাস্তানি রোধ করতে হবে।
  • কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে কৃষকদের মধ্যে সহজশর্তে ঋণদান, ভালো বীজ সরবরাহ ও প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশকের সহজ প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে।
  • কলকারখানা প্রতিষ্ঠা ও বন্ধ কলকারখানা চালু করে তার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে।
  • কর ব্যবস্থা সহজিকরণ করতে হবে।
  • সমাজ থেকে কালোবাজারি, সুদখোর, মজুতদারদের উৎখাত করতে হবে। এজন্য শুধু সরকারিভাবে না করে সামাজিকভাবে তাদের বয়কট করা যেতে পারে।
  • ঘুষদুর্নীতির মতো অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে প্রশাসনের সাথে সাথে তীব্র সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
  • প্রতিটি দোকানে, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে দ্রব্যমূল্যের তালিকা সরকারিভাবে প্রদান ও তা সংরক্ষণ এবং তদনুসারে বেচাকেনা করা বাধ্যতামূলক করা।

উপসংহার: যেসব কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ঘটে সেগুলো প্রতিরোধ করতে পারলেই বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। ফলে মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত দ্রব্যটি পাবে তার ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে।